চোখে মূলত তিন ধরনের পানি তৈরি হয়। বেসাল, ইরিট্যান্ট এবং ইমোশনাল। চোখে যদি পানি তৈরি না হয় তবে চোখে শুকিয়ে যাবে। তাই সব সময়ই চোখে পানি তৈরি হয়, যেটি চোখ ভালো রাখে।
চোখে সাধারণ অবস্থায় যে পানি তৈরি হয় সেটির নাম বেসাল। হঠাৎ পেঁয়াজ কাটছেন বা চোখে কিছু ঢুলে গেলে চোখ পানিতে ভরে ওঠে, এটি ইরিট্যান্ট। আর যেটিকে আমরা কান্না বলি। রাগ, অভিমান, কষ্টে চোখ যে পানিতে ভরে ওঠে সেটি ইমোশনাল।
এ তো গেল কান্নার প্রকারভেদ। এবার আসা যাক স্বাদে। চোখের পানির স্বাদ যে নোনতা, সেটি আমরা সবাই জানি। চোখের পানি মূলত তৈরি হয় ল্যাকরিমাল গ্ল্যান্ড থেকে। এতে থাকে ফ্যাটি অয়েল, ম্যুকাসসহ প্রায় দেড় হাজার রকমের প্রোটিন। চোখের পানি যেন শুকিয়ে না যায় এক্ষেত্রে সহায়তা করে ম্যুকাস উপাদান। আর ইমোশনাল চোখের পানিতে মিশে থাকে স্ট্রেস হরমোন। ফ্যাটি অয়েল চোখের পানির স্থায়িত্ব ধরে রাখে। এসব উপাদানের সমন্বয়ে চোখের পানির স্বাদ লবণাক্ত হয়।
তাছাড়া, চারদিক ভালোভাবে দেখার জন্য চোখের মণি সব সময় নড়াচড়া করে। এ জন্য চোখ ভেজা থাকতে হয়। চোখের পানি সামান্য নোনা থাকলে সেটা চোখ পিচ্ছিল রাখতে সাহায্য করে। চোখের পানিতে বিভিন্ন রকম লবণ দ্রবীভূত হয়। এই লবণ আসে রক্ত থেকে।
আমরা যে খাবার খাই, তার একটি উপাদান লবণ। শরীরের পাকস্থলী খাদ্য থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করে। এ সময় লবণ রক্তপ্রবাহে সঞ্চালিত হয়। ল্যাক্রিম্যাল গ্ল্যান্ড থেকে চোখের পানি বের হয়। এই গ্ল্যান্ড দিয়ে রক্ত সঞ্চালিত হওয়ার সময় চোখের পানি লবণাক্ত হয়ে পড়ে।
চোখের পানিতে লবণ কতটা ও কী অনুপাতে আছে, তার রাসায়নিক বিশ্লেষণ সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ১৭৯১ সালে, ফরাসি রসায়নবিদ ল্যাভয়সিঁয়ে সম্পাদিত একটি বৈজ্ঞানিক সাময়িকীতে। সেখানে উল্লেখ করা হয় যে চোখের পানিতে সবচেয়ে বেশি রয়েছে সোডিয়াম ক্লোরাইড। এটা হলো সেই লবণ, যা আমরা রান্নার সময় ব্যবহার করি। এরপরই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ লবণ হলো পটাশিয়াম ক্লোরাইড। এ ছাড়া রয়েছে ক্যালসিয়াম বাইকার্বনেট, ম্যাঙ্গানিজসহ আরও কিছু উপাদান, যা লবণ তৈরিতে সাহায্য করে।
১৯৫০ সালে এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, চোখের পানিতে সোডিয়ামের ঘনত্ব যতটা, রক্তের মূল উপাদান রক্তরসেও ততটা। সে জন্য রক্তের স্বাদও নোনা। রক্তরসের এই সোডিয়ামই চোখের পানিকে নোনা করে।
আসলে চোখের পানি নোনা হলেও তাতে লবণের ভাগ খুবই কম। হালকা নোনা হওয়ার কারণেই চোখের পানিতে তেমন কোনো অস্বস্তিবোধ হয় না।