সাহিত্য, অন্যান্য

আফতাব আহমদের মৃত্যুতে নুহাশ হুমায়ূনের মর্মস্পর্শী পোস্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

ডিবিসি নিউজ

বৃহঃস্পতিবার ৬ই জুলাই ২০২৩ ০২:৫৫:৪১ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

সোমবার (৩ জুলাই) রাত ১০টার দিকে বনানীর ইয়র্ক হাসপাতালে মারা যান যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব একইসঙ্গে কবি-লেখক হিসেবে পরিচিত আফতাব আহমেদ। জানা যায়, হৃদরোগসহ একাধিক জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে ফেসবুকে মর্মস্পর্শী পোস্ট দিয়েছেন হুমায়ুন-পুত্র নুহাশ।

আফতাব আহমদের মৃত্যুর পরপর নিজের ফেসবুকে এক শোকবার্তায় নুহাশ তাকে নিজের পরিবারের একজন উল্লেখ করে লেখেন, ‘...চার মাসেরও বেশি আগে তিনি একাধিক স্ট্রোকের শিকার হন। এরপর তিনি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখান থেকে বাইরে এসেছেন, আবার আইসিইউতে গেছেন। তিনি কথা বলার ক্ষমতাও হারিয়েছিলেন। নড়াচড়ার ক্ষমতাও পুরোপুরি ঠিক ছিল না। শেষ পর্যন্ত তিনি কিছুটা শান্তি পেয়েছেন, এই আশা করি।

আফতাব চাচা ও আমার মা বিবাহিত ছিলেন চার বছরেরও বেশি সময় ধরে। তবে তাঁকে “সৎবাবা” বললে আমাদের মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক বোঝা যাবে না।আমার কাছে তিনি ছিলেন পরিবার, একজন প্রিয় বন্ধু আর একই সঙ্গে আমার সৃষ্টিশীল কাজের সহযোগী। টেলিভিশনে প্রচারিত আমার প্রথম কাজের তিনি ছিলেন গীতিকার। আমার সদ্য প্রচারিত ধারাবাহিক “ষ”তে তিনি ছিলেন আমার সহলেখক। গত কয়েক মাসে আমি হাসপাতালের অনেক ফরম পূরণ করেছি। সেখানে সম্পর্কের জায়গায় লিখেছি “পুত্র”। আর তা লিখেছি সরাসরি হৃদয় থেকে। একজন কবি, একজন পারিবারিক মানুষ, ব্যক্তি আর পেশাজীবনে তিনি বহু ভূমিকা পালন করেছেন।

ইউএনডিপির তাঁর একজন সহকর্মী তাঁর পরিচয় তুলে ধরেছেন এভাবে: “সৎ, বিচক্ষণ, কথায় রসিকতার ঝলক ও কবিতা ও জীবন উভয় ক্ষেত্রেই বাঙালী রোমান্টিকতা ছোঁয়া একজন শেকস্‌পিয়ারীয়।” তাঁর জন্য প্রার্থনা করবেন। তাঁর সব শুভাকাঙ্ক্ষী, তাঁর পরিবার এবং তাঁর অসাধারণ ছেলে আবরারকে ভালোবাসা জানাই।’

প্রসঙ্গত, অভিনেত্রী আয়েশা আখতারের ছেলে আফতাব আহমদ প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ২০১৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের সাবেক স্ত্রী গুলতেকিনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন।

পেশাজীবনে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করলেও আফতাব আহমদের প্রথম পরিচয় ছিল, তিনি ছিলেন কবি। ‘তুমি নও কখনো আঁধারে’ (১৯৯১), ‘যা কিছু স্বর্গীয় ছিলো’ (২০১৬) তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। কবিতায় রোমান্টিকতার এক অন্য তরঙ্গ স্পর্শ করেছিলেন তিনি। তার কবিতায় যেমন প্রতিভাত হয়েছে সহজ এক আবেগ, তেমনি ছিল প্রজ্ঞার ছোঁয়াও। ‘তোমাকে দেখি না’ নামে তার একটি কবিতায়ও বিষয়টি ধরা দিয়েছে।
‘পড়ে জল, নড়ে পাতা

সারা রাত
বেজে যায় বীণা

শত মুখ
দিনমান
ভাসে চারিদিকে

নেচে ফেরে
মাতাল দখিনা

আমি শুধু তোমাকে
দেখি না।’

এই কবিতার মধ্যে রোমান্টিসিজম আছে, পাশাপাশি রয়েছে আবহমান বাংলা কবিতার সৌন্দর্য। এই কবিতার মতো তার অন্য কবিতায়ও পাওয়া যায় একধরণের ধ্রুপদি আবহ।

কবিতা লেখার পাশাপাশি গুলতেকিন খানের সঙ্গে মিলে ‘মধুরেণ’ (২০১৭) নামে একটি কাব্যনাট্যও লিখেছিলেন আফতাব আহমদ। আবার গুলতেকিন খানও আফতাব আহমদের এক জন্মদিনে তাকে উৎসর্গ করে লিখেছিলেন কবিতা। ‘তোমার জন্যে মাত্রাবৃত্তে’ নামে সেই কবিতায় তিনি আফতাবকে উদ্দেশ্য করে গাঁথেন বিচিত্র উপমার মালা:

‘তোমার জন্যে মাত্রা বৃত্তে লিখব বলে যখন ভাবি
ছিপের তিন মাল্লা মিলে হারিয়ে ফেলে নাকের ছবি
যখন ভাবি তোমায় নিয়ে উঠবো গিয়ে নতুন তীরে
শ্যাওলা জলে নোলক খুঁজে পানকৌড়ি যায় না ফিরে।

এমন একটা ছন্দ পেতাম তোমায় নিয়ে মুখ ঢাকা যায়
বৈঠা হেনে ছিপটি টেনে হয়ে গেছি আজ অসহায়
ঝড়ে ডোবার জাহাজ তুমি নও যে সেটা সবাই জানে
তোমার কিছু যায় আসে না মানে কিংবা অসম্মানে।

তোমার জন্যে মাত্রা বৃত্তে লিখব বলে ভাবতে থাকি
নাগরদোলায় একটু সময়, আর কিছুটা থাকুক বাকি।’

ডিবিসি/আরপিকে

আরও পড়ুন