সন্ত্রাসীদের গুলিতে ভুবনের মৃত্যু

‘বাবা আর বলবে না, তোমার জন্য কী আনতে হবে মা’

ডেস্ক নিউজ

ডিবিসি নিউজ

মঙ্গলবার ২৬শে সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৪:০৩:৫৪ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

একমাত্র মেয়ে ভূমিকা শীল, স্ত্রী শিক্ষিকা রত্না রানী শীল ও অসুস্থ মা গিরিবালা শীলকে নিয়ে সাজানো সংসার ছিল আইনজীবী ভুবন চন্দ্র শীলের (৫৫)। আজ গুলিবিদ্ধ ভুবনের মৃত্যুর খবর শোনার পর কয়েকবার জ্ঞান হারিয়েছেন স্ত্রী রত্না।

ভুবনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর শুনে এক কাপড়ে ঢাকা চলে আসেন স্ত্রী রত্না ও মেয়ে ভূমিকা। পরিবারের অভিভাবকের উৎকণ্ঠায় পুরো সময় রাজধানীর ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) সামনে সিঁড়িতেই কেটেছে মা-মেয়ের। ৮ দিন পর আজ ভুবনের নিথর দেহ নিয়ে নোয়াখালী ফিরছেন তারা। তবে ভুবনের মা এখনও ছেলের মৃত্যুর খবর জানেন না।

সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা ৩৫মিনিটে যখন চিকিৎসকরা ভুবনকে মৃত ঘোষণা করেন, তখনও তার স্ত্রী রত্না হাসপাতালের সিঁড়িতে অপেক্ষায় ছিলেন। চিকিৎসকের মুখ থেকে ভুবনের মৃত্যুর সংবাদ শুনে তিনি বলে ওঠেন, ‘স্যার, ভুবন আমাদের রেখে মরতে পারে না। আপনারা আরও একটু চেষ্টা করে, তাকে মৃত ঘোষণা করবেন না। তার বাঁচানোর জন্য আরও চেষ্টা করুন।’

বাবার মৃত্যুর খবর শুনে মা রত্নার কাঁধে মাথা রেখে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছিল একমাত্র মেয়ে ভূমিকা। অস্পষ্ট কণ্ঠে ভূমিকা বলেন, বাবার সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়েছিল ঘটনার আগের দিন রাত ১২টার দিকে। এ সময় বাবু বলছিল, কদিন পরই বাড়ি আসবো। তোমার জন্য কী আনতে হবে মা।

তিনি আরও বলেন, বাবু-মায়ের একমাত্র মেয়ে হওয়া তারা মাঝেমধ্যে আমাকে নিয়ে বাজি ধরতেন। আমি কাকে বেশি ভালোবাসি সেটা নিয়ে। কিন্তু আমি বাবুকেই বেশি ভালোবাসতাম। বাবু তো আমাদের ফেলে রেখে চলে গেলেন। বাবু আমাকে সবসময় মা বলে ডাকতেন। এখন আমাকে কে ডাকবে মা বলে। আর আমি কার মা হবো।

ভুবন গত ১৮ সেপ্টেম্বর বারিধারার গোমতী টেক্সটাইল লিমিটেডের অফিস থেকে মতিঝিলের আরামবাগের মেসে ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন। এদিন রাতে পৌনে ১০টার দিকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনের গাড়ি ঘিরে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা গুলি ছোড়ে। এ সময় মামুন গাড়ি থেকে বেরিয়ে দৌঁড় দিলে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে সন্ত্রাসীরা। তাদের ছোড়া গুলিই মোটরসাইকেল আরোহী ভুবন ও পথচারী আরিফুল হক ইমনকে বিদ্ধ করে।

ঘটনার দিন থেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় লাইফ সাপোর্টে ছিলেন ভুবন। আজ রাজধানীর পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় আহত মামুন ও আরিফুল চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। 

স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে স্ত্রী রত্না বলেন, কে গুলি করেছে, জানি না। আমার স্বামী তো চলেই গেল। যারা গুলি করেছে, তাদের বিচারটা যেন হয়। এখন একটাই চাওয়া, এভাবে আর কোনো সন্তানের বাবাকে যেন পৃথিবী ছেড়ে যেতে না হয়। আমার মেয়েটা এত অভাগা, তার ছোট ছোট স্বপ্নও আর পূরণ হলো না।

ভুবনের মৃত্যুর সংবাদ শুনে হাসপাতলে ছুটে আসেন তার সহকর্মীরা। তারাই রত্নাকে বারবার সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

ডিবিসি/ এইচএপি

আরও পড়ুন