ঘটে গেল ক্রিকেট ইতিহাসের নজিরবিহীন এক ঘটনা। বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ‘টাইমড আউট’ হলেন ৩৬ বছর বয়সি লঙ্কান তারকা ক্রিকেটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। এ ধরনের আউট আগে কখনও দেখা যায়নি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। বিষয়টা তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের শ্রীলঙ্কার ইনিংসের ২৪.২ ওভারে সাদিরা সমরবিক্রম মাহমুদুল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। শ্রীলঙ্কার রান তখন ৪ উইকেটে ১৩৫। সমরবিক্রম ফেরার পর নতুন ব্যাটার হিসেবে মাঠে নামেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। ক্রিজে আসার পর তিনি দেখেন তার হেলমেটের স্ট্র্যাপে কোনও একটা সমস্যা রয়েছে। ম্যাথিউজ ড্রেসিং রুমে ইশারা করেন নতুন হেলমেটের জন্য। নতুন হেলমেট আনতে কিছুটা দেরি হয়ে যায়। সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। করে বসেন আউটের আবেদন।
তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতেই অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজকে টাইমড আউট দেওয়া হয়। দর্শক-সমালোচকদের কেউ কেউ বলছেন, বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান কাজটা ঠিক করেননি। আসলেই কি সাকিব কাজটা ঠিক করেননি? এসব বিষয়ে বলার আগে আসুন জেনে নিই ‘টাইমড আউট’ বিষয়টা আসলে কী?
ক্রিকেট আইনের ৪০.১.১ ধারা অনুযায়ী, ‘উইকেট পতনের পর কিংবা ব্যাটার অবসৃত হওয়ার পর নতুন ব্যাটার ৩ মিনিটের মধ্যে পরবর্তী বলের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হবেন। এই শর্ত পূরণ করতে না পারলে নতুন ব্যাটার আউট হবেন। সেই আউট টাইমড আউট নামে পরিচিত।
তবে বিশ্বকাপে আইসিসির প্লেয়িং কন্ডিশন অনুযায়ী, ৩ মিনিট নয়, ব্যাটারকে পরবর্তী বলের মুখোমুখি হওয়ার জন্য ২ মিনিটের মধ্যে প্রস্তুত থাকতে হবে। হেলমেট বদলাতে গিয়ে ম্যাথিউজ সেই সময়ের মধ্যে প্রস্তুত হতে পারেননি। ফলে আইন মেনেই তাকে ‘টাইমড আউট’ করা হয়।
ওয়ানডেতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফিল্ডিং সাইডকে ইনিংস শেষ করতে হয়। তা না করতে পারলে ফিল্ডিং সাইডকেই জরিমানা করা হয়। ব্যাটার যদি দেরি করে, সেটা যেন বোলিং সাইডের জরিমানার কারণ না হয়; সে কারণে টাইমড আউট নিয়মটা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
২০০৬-০৭ মৌসুমে নিউল্যান্ডসে আয়োজিত ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে শচীন টেন্ডুলকার ক্রিজে পৌঁছতে দেরি করেছিলেন। তার পরেও ‘টাইমড আউট’-এর আবেদন করেননি দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ। ক্রিকেটের স্পিরিট না মেনে কেন বাংলাদেশের অধিনায়ক টাইমড আউটের আবেদন করেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। কিন্তু ক্রিকেটের তথাকথিত স্পিরিটকে দূরে সরিয়ে রেখে আইনের নিরিখে বিচার করলে ‘টাইমড আউট’-র আবেদন করে কোনও ভুল করেননি বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন ঘটনা কম ঘটলেও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৬ বার এমন ঘটনা ঘটেছে। ভারতের মাটিতে টাইমড আউটের ঘটনা দ্বিতীয়বারের মতো দেখা গেল। ১৯৯৭ সালের ২০ ডিসেম্বর উড়িষ্যার বিপক্ষে রঞ্জি ট্রফির ম্যাচে ত্রিপুরার হেমু যাদব টাইমড আউট হয়েছিলেন। সেদিন ত্রিপুরার নবম উইকেট পড়ার পর সময়মতো প্যাড আপ করে মাঠে যেতে পারেননি যাদব।
ডিবিসি/আরপিকে