বাংলাদেশ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে যেসব যোগ্যতা থাকতে হবে

ডেস্ক প্রতিবেদন

ডিবিসি নিউজ

বৃহঃস্পতিবার ১৬ই নভেম্বর ২০২৩ ১০:৪৫:৫১ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। এ সংসদ নির্বাচনে কারা কারা প্রার্থী হতে পারবেন আর কারা পারবেন না সে বিষয়ে প্রার্থীর যোগ্যতা ও অযোগ্যতার বিধান জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) এ তথ্য জানিয়েছে ইসি। নির্বাচন কমিশন এই সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করেছে। যেখানে সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগ্যতা ও অযোগ্যতার বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে কারা কারা সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন সে বিষয়েও জানিয়েছে ইসি।

প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা ও অযোগ্যতার বিধানে যা আছে: জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার বা থাকার যোগ্যতা-অযোগ্যতা সংক্রান্ত সংবিধানের ৬৬(১) (২) অনুচ্ছেদে ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ১২(১) অনুচ্ছেদে বিধান রয়েছে। সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদের “প্রজাতন্ত্রের কর্ম” ও “সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ” এর ব্যাখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। 

অনুচ্ছেদ ১২ এর উপ-ধারা (ড) অনুযায়ী কোম্পানীর পরিচালক বা ফার্মের অংশীদার কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে গৃহীত কোনো ঋণ বা তার কোনো কিস্তি মনোনয়নপত্র দাখিলের দিনের পূর্বে পরিশোধে ব্যর্থ হলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে অযোগ্য হবেন। কিন্তু অনুচ্ছেদ ১২ এর দফা (১) এর উপ-দফা (ঠ) কৃষি কাজের জন্য গৃহীত ক্ষুদ্র কৃষি ঋণ ব্যতীত, মনোনয়নপত্র দাখিলের দিনের পূর্বে ব্যাংক হতে গৃহীত কোনো ঋণ বা তার কোন কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে অযোগ্য হবেন। 

সেই সঙ্গে উপ-দফা (ঢ) অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের দিনের পূর্বে প্রদেয় সরকারি টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি বা অন্য কোন সেবা প্রদানকারী সংস্থার বিল পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে অযোগ্য হবেন।

 

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মেয়র ও চেয়ারম্যানদের প্রার্থী হওয়া: উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান এবং সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মেয়রের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত অফিস/প্রতিষ্ঠানের বা করপোরেশন অথবা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, কর্তৃপক্ষ এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনগুলোয় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য পদ্ধতিগতভাবে পদত্যাগ করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

সংবিধানের বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের নাগরিক ও ২৫ বছর বয়স হলে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য হবেন। তবে আদালতে অপ্রকৃতিস্থ ও দেউলিয়া হলে; বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন বা আনুগত্য স্বীকার করলে; নৈতিক স্খলনজনিত কোনও ফৌজদারি অপরাধে দুই বছর বা তার বেশি কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে; ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ যোগসাজশকারী (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশের অধীন কোনও অপরাধের জন্য দণ্ডিত হলে; প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনও লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত হলে অথবা অন্য কোনও আইনে নির্বাচনের জন্য অযোগ্য হলে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।

 

প্রার্থীকে বাংলাদেশের যেকোনও নির্বাচনি এলাকায় ভোটার হতে হবে। দ্বৈত নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা যাবে না। তবে বিদেশি নাগরিকত্ব ত্যাগ করে এলে নির্বাচনে অযোগ্য হবেন না। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর ক্ষেত্রে লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত বলে গণ্য হবে না। প্রজাতন্ত্রের কর্ম বলতে অসামরিক বা সামরিক ক্ষমতায় বাংলাদেশ সরকার-সংক্রান্ত কর্ম, চাকরি বা পদ এবং সরকারের সংবিধিবদ্ধ যেকোনও কর্তৃপক্ষ, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বোঝাবে।

কোনও ব্যক্তি দেশের কোনও নির্বাচনি এলাকায় ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত না হলে; কোনও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মনোনীত না হলে বা একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী না হলে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হবেন না।

প্রজাতন্ত্র বা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের চাকরি থেকে পদত্যাগ বা অবসর, অবসরের পর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে এবং বিদেশি রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠানের অনুদানে পরিচালিত বেসরকারি সংস্থার কার্যনির্বাহী পদ থেকে পদত্যাগ বা অবসর বা পদচ্যুতির ক্ষেত্রে তিন বছর ও দুর্নীতির কারণে চাকরিচ্যুত বা বাধ্যতামূলক অবসরের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর অতিক্রম না হলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন ন।

ছবিসহ ভোটার তালিকার ব্যবহার
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বর্তমানে প্রণীত ছবিসহ ভোটার তালিকা ব্যবহার করতে হবে। ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণের কাজে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ছবিসহ ভোটার তালিকা ব্যবহার করবেন। তবে প্রার্থী বা তার নির্বাচনী এজেন্ট বা পোলিং এজেন্টকে ছবি ছাড়া ভোটার তালিকার সিডি ক্রয় করতে পারবেন। 

এজন্য জেলা বা উপজেলা পর্যায় হতে অথবা রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের অফিস হতে মনোনয়নপত্র গ্রহণের সময় নির্বাচনী এলাকার আওতাধীন প্রতি ইউনিয়নের জন্য ৫০০ টাকা এবং সিটি করপোরেশন বা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড/পৌরসভার প্রতি ওয়ার্ডের জন্য ৫০০ টাকা হারে ট্রেজারি চালান/পে-অর্ডার মাধ্যমে টাকা জমা দিতে হবে। ট্রেজারি চালানের কোড নং ১-০৬০১-০০০১-২৬৩১” নবসৃজিত কোড “১০৬০১০১১০০১২৫-১৪২৩২৫৩”। ছবিসহ ভোটার তালিকা শুধুমাত্র নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা ব্যবহার করবেন।

রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ
নির্বাচন পরিচালনার জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর নির্বাচনী এলাকার জন্য বিভাগীয় কমিশনারকে এবং অন্যান্য নির্বাচনী এলাকার জন্য জেলা প্রশাসকদেরকে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের স্ব-স্ব উপজেলার জন্য এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, সিটি করপোরেশনের জোনাল এক্সিকিউটিভ অফিসার, উপপরিচালক, স্থানীয় সরকার, ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার, উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসার অথবা অন্য কোনো কর্মকর্তাকে সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের কর্মক্ষেত্রও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। 

নির্বাচন পরিচালনা সহকারী রিটার্নিং অফিসাররা আইন ও বিধি মোতাবেক রিটার্নিং অফিসারকে সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করা হবে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ সাপেক্ষে, রিটার্নিং অফিসারের অধীনে থেকে প্রয়োজনবোধে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন।

সময়সূচি সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি
গণ-প্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ১১ এর দফা (২) ও (৩) অনুসারে সময়সূচি জারির পর, যথাসম্ভব, রিটার্নিং অফিসাররা তাদের আওতাভুক্ত নির্বাচনী এলাকায় সময়সূচির প্রজ্ঞাপন এবং সময়সূচির আলোকে গণ-বিজ্ঞপ্তি জারি করবেন। 

গণ-বিজ্ঞপ্তিতে কমিশন কর্তৃক ঘোষিত সময়সূচির উল্লেখ থাকবে। এতদভিন্ন রিটার্নিং অফিসার/সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিকট মনোনয়নপত্র দাখিলের স্থান ও সময় উল্লেখ করে একই গণ-বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মনোনয়নপত্র আহ্বান করতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, মনোনয়নপত্র অফিস চলাকালীন সময় অর্থাৎ সকাল ৯টা হতে বিকাল ৪টা পর্যন্ত গৃহীত হবে।

 

আরও উল্লেখ্য যে, নির্ধারিত তারিখ ও সময়ের মধ্যে সরাসরি মনোনয়নপত্র দাখিলের পাশাপাশি অনলাইনেও মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে। গণ-বিজ্ঞপ্তির অনুলিপি সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার দর্শনীয় স্থানসমূহ এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের অফিসে টাঙিয়ে দিতে হবে।

মুদ্রিত ছবিসহ ভোটার তালিকার সঙ্গে ছবি ছাড়া সিডি যাচাই: প্রার্থীদেরকে প্রদত্ত ছবি ছাড়া ভোটার তালিকার সিডির সঙ্গে ছবিসহ মুদ্রিত ভোটার তালিকা শতভাগ যাচাই করে ভোটকেন্দ্রে প্রেরণ করতে হবে।

আরও পড়ুন