একটি শিশু পরিবারে জন্মগ্ৰহন করে এমনিতে মানুষের সব গুনাগুন নিয়ে বেড়ে ওঠেনা। তাকে প্রকৃত মানুষ আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হয় পরিবারকে। সন্তানকে যথাযথ শিষ্টাচার দিয়ে বড় করতে হবে। এ সময় যা কিছু শেখাবেন, তা সারা জীবনের জন্য মাথায় গেঁথে যাবে।
বেশ কিছুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঝড় উঠেছে এ নিয়ে। একপক্ষ বলছেন, সন্তানকে আভিজাত্য শেখান তো আরেক পক্ষ বলছেন, সন্তানকে অভাব শেখান। দুই পক্ষই সমানে যুক্তি তুলে ধরছেন যার যার বক্তব্যের সমর্থনে। সন্তানকে অভাব নাকি আভিজাত্যের মধ্যে কোনটা শেখাবেন সেটি নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় থাকেন।
মা-বাবাই একজন মানুষের প্রথম শিক্ষক, তার মানে এই না যে কাগজে-কলমেই শেখাতে হবে। সন্তান মূলত তা-ই শিখবে, যা আপনাদের ভেতরে দেখতে পাবে। অর্থের অভাব থাকলেও অন্তরের আভিজাত্য যেন নষ্ট না হয়, সন্তানকে সেটাই শেখান। আপনার সন্তানকে একজন ইতিবাচক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করুন।
সন্তানকে একজন ইতিবাচক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করুন। মা-বাবার মধ্যে ইতিবাচকতা, অন্যের যেকোনো খুশির খবরে আনন্দিত হওয়া, অন্যের কষ্টে কষ্ট পাওয়া, ক্ষমা করতে জানা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করলে শিশু তা-ই শিখে শিখে বড় হবে। শিশুর মধ্যে কোনো নেতিবাচকতা গড়ে উঠতে দেখলে সঙ্গে সঙ্গেই তাকে সতর্ক করতে হবে। এর ভয়াবহতা তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে।
একজন ভালো মানুষের স্বভাবে থাকে বিনয়, থাকে ক্ষমা করার মতো উদারতা। এই দুই শিক্ষা সন্তান যেন আপনার কাছ থেকে পায়। তাকে শেখান, ঘৃণার চেয়ে ক্ষমা সুন্দর।
সন্তানকে সঞ্চয়ী বানাতে চাইলে আগে নিজে সঞ্চয়ী হোন। কেননা, শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। আপনার সন্তানকে সঞ্চয়ের প্রয়োজনীয়তা উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে বলুন। চাইলেই কিছু পাওয়া যায়, এমন ধারণা যেন আপনার সন্তানের না হয়। মাঝেমধ্যে আপনার সন্তানকে দিয়ে ঘরের কাজ করান। আর সেজন্য তাকে অর্থ দিন। একটা শিশু যখন পরিশ্রম করে টাকা পাবে, তখন সে সেই কষ্টে উপার্জিত অর্থ খরচ করার বিষয়ে ভাববে ও সচেতন হবে। সন্তানকে কোনটা প্রয়োজন আর কোনটা বিলাসিতা, সেটা বুঝিয়ে বলুন।
সন্তানকে একজন নির্লোভ মানুষ হিসেবে দেখতে চাইলে সবার আগে আপনাকে নির্লোভ থাকতে হবে। আপনি যদি অন্যের জিনিসের প্রতি লোভ করেন, যদি কর্মজীবনে অসৎ হন, যদি ঘুষ-সুদ ইত্যাদি গ্রহণ করেন, যদি দরিদ্রের সম্পদ দখল করেন, যদি আত্মীয়ের হক নষ্ট করেন, ভাই-বোনদের সম্পদ থেকে বঞ্চিত করেন তাহলে জেনে রাখুন, আপনার সন্তানের কাছ থেকে এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করা ভুল হবে। নিজে যে পথে থাকবেন, সন্তান তো সেই পথেই যাবে। তাই নিজের পথটা সহজ রাখুন। তখন সন্তানই আপনার সম্পদ হয়ে উঠবে।
পরিস্থিতি বুঝতে পারা এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক বড় গুণ। এটি আপনার সন্তানের মধ্যে গড়ে তুলতে পারলে নিশ্চিন্ত হতে পারবেন অনেকটাই। শুধু ফুলের কোমলতা নয়, সন্তানকে শেখান প্রয়োজনে লৌহ কঠিনও হতে। ফুল ভেবে কেউ যদি তাকে পায়ে দলতে আসে, তাকে যেন সেই সুযোগ দেওয়া না হয়, সন্তানকে এটুকু শেখাতে হবে। কখন কোমল হওয়া প্রয়োজন এবং কখন তাকে কঠিন হতে হবে, এটা বুঝতে শেখান।
সর্বোপরি, এটা বলা যায় যে, সন্তান বাবা-মায়েরই প্রতিচ্ছ্ববি। তাদেরকে অভাব বা আভিজাত্য কিংবা যেকোন অভ্যাস শেখানোর আগে সেই অভ্যাস আমাদের ধারণ করাটা জরুরি। মনে রাখতে হবে, সন্তান প্রথমে নরম মাটির মত থাকে। তার স্বভাব যে গড়নে গড়বেন সেই আকৃতিতেই গড়ে উঠবে আপনার সন্তানের বৈশিষ্ট্য।