ঘূর্ণিঝড় হল সমুদ্রে সৃষ্ট বৃষ্টি, বজ্র ও প্রচণ্ড ঘূর্ণি বাতাস সংবলিত আবহাওয়ার একটি নিম্নচাপ প্রক্রিয়া। এই ধরনের ঝড়ে বাতাস প্রবল বেগে ঘুরতে ঘুরতে ছুটে চলে বলে এর নামকরণ হয়েছে ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড়ের ঘূর্ণন উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে হয়ে থাকে।
সমুদ্রে জন্ম নেওয়া দুর্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম ঘূর্ণিঝড়। তবে সমুদ্র ছাড়াও ঘূর্ণিঝড়ের জন্ম হতে পারে, কিন্তু সেই ঘূর্ণিঝড় সমুদ্রে সৃষ্ট ঝড়ের মতো শক্তিশালী হয় না। আবার সমুদ্র একাই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি করে, ব্যাপারটা এমনও নয়। বিশেষ করে সূর্য ও বায়ুমণ্ডলের প্রভাব, বায়ুর ঘনত্বের প্রভাব, তাপমাত্রার পার্থক্যের প্রভাব ইত্যাদি বিষয় জড়িত থাকে একটা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পেছনে।
ঘূর্ণিঝড়ের গঠন, চরিত্র, শক্তি, চাপসহ নানা বিষয় এর তীব্রতা নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে এবং সেসব হিসাব করেই জানা যায়, সামুদ্রিক ঝড়ের কোনটি উপকূলের দিকে ধেয়ে আসবে।
কোনো স্থানে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে উষ্ণ বায়ু ওপরে উঠতে থাকে। সমুদ্রের কোনো স্থানে বাতাসের চাপ কমে গেলে সেখানে লঘুচাপ তৈরি হয়। তখন আশেপাশের জলীয়বাষ্প পূর্ণ শীতল বাতাস ওই স্থানে চলে আসে। চারপাশ থেকে আসা বাতাসের মিথস্ক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হয় ঘূর্ণিঝড়ের। ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি বাড়তে থাকলে এটি আরও মেঘ আর জলীয় বাষ্প পূর্ণ বায়ু বহন করে থাকে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস সবচেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে অবতল আকৃতির অগভীর বা উপসাগরে। মৌসুমি ঘূর্ণিঝড়ের তীব্র বাতাস যখন এরকম জায়গায় সাগরের পানিকে ঠেলতে থাকে, তখন ফানেল বা চোঙার মধ্যে তরল পদার্থ যে আচরণ করে, এখানেও তাই ঘটে। সাগরের ফুঁসে ওঠা পানি চোঙা বরাবর ছুটতে থাকে।
আবহাওয়াবিদ ও ওয়েদার আন্ডারগ্রাউন্ডের একজন লেখক বব হেনসনের ভাষ্য অনুযায়ী – ‘এরকম ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যের টেক্সটবুক উদাহরণ হচ্ছে বঙ্গোপসাগর’। তবে বঙ্গোপসাগরে এর সঙ্গে যুক্ত হয় আরও বাড়তি কিছু বৈশিষ্ট্য। যেমন সমুদ্রের উপরিতল বা সারফেসের তাপমাত্রা। এটি পরিস্থিতিকে আরও বিপদজনক করে তোলে- বলছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।
সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা ২৬.৫ বা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকলে ঘূর্ণিঝড়ের পরিবেশ তৈরি হয়। যদি কোনো নিম্নচাপ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার গতিবেগ অর্জন করে, তখন সেটাকে আঞ্চলিক ঝড় বলে মনে করা হয়। কিন্তু সেটি যদি ঘণ্টায় ১১৯ কিলোমিটার (৭৪ মাইল) গতিবেগ অর্জন করে, তখন সেটাকে সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় বলা হয়।
যাত্রাপথ কম হলে ঝড়ের শক্তি বাড়ে কিন্তু যাত্রাপথ দীর্ঘ হলে এর শক্তি কিছুটা ক্ষয় হতে পারে। এছাড়া সমুদ্রের উপরিভাগের তাপমাত্রা ঝড়ের শক্তিসঞ্চয়ের অনুকূল না হলে স্থলভাগে পৌঁছানোর আগেই ঝড়ের গতি কমে যেতে পারে।