শীতের বাজারে সমাহার থাকে নানা ধরনের সবজির। তার মধ্যে অন্যতম হলো বিটরুট। গাঢ় লাল রঙের এই সবজি আপনার জন্য কতটা উপকারী, তা হয়ত অনেকেই জানেন না। এই সবজির গন্ধের কারণে অনেকে এটি পছন্দ করেন না। তবে এর গন্ধ ততটাও উৎকট নয়। একেক সবজির তো একেক রকম গন্ধ থাকবেই। বিটেরও নিজস্ব গন্ধ রয়েছে। তবে এর উপকারিতার দিকে খেয়াল করলে এসবকিছু আর মাথায়ই থাকবে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিটরুটে থাকে অসংখ্য পুষ্টিগুণ। আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণভাবে উপকারী এই বিট। যারা দীর্ঘদিন ধরে বাতের ব্যথায় ভুগছেন বা উচ্চ রক্তচাপের রোগী, আবার যারা দ্রুত ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য তো বিটরুট অনেক বেশি কার্যকরী একটি খাবার হিসেবে কাজ করে।
বিটরুটে থাকে আয়রন, ফাইবার, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজের মতো নানা প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ। এতে আরও থাকে বিটানিন পিগমেন্ট, যে কারণে বিটরুটের রং লাল হয়। এই বিটানিন হলো এক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টও, যা শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী হিসেবে কাজ করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই শীতে বিটরুট খেলে আপনার কী উপকার মিলবে-
ওজন কমায়: যারা ওজন কমাতে চাচ্ছেন তাদের জন্য একটি উপকারী খাবার হতে পারে বিটরুট। কারণ এতে ক্যালোরি থাকে খুবই কম। আর ফ্যাট নেই বলতে গেলে। প্রতিদিন সকালে আপনি যদি এক কাপ বিটের রসের সঙ্গে ২ মিলি অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে খান তবে দ্রুতই সুফল টের পাবেন। মাত্র এক মাসেই ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
ত্বক ভালো রাখে: ত্বক ভালো রাখতে আপনার নানা প্রাচেষ্টা রয়েছে নিশ্চয়ই? এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে বিটরুট। কারণ আপনি যদি নিয়মিত বিটরুট খান তবে তা আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে। এছাড়াও বিটরুট দিয়ে করতে পারেন রূপচর্চা। সেজন্য বিটরুসের রস বের করে তা পুরো মুখে লাগিয়ে অপেক্ষা করুন মিনিট দশেক। এরপর শুকিয়ে এলে ভালো করে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এতে ত্বকে বলিরেখা থাকলে তাও দূর হবে। সেইসঙ্গে বিটের অ্যান্টিসেপটিক উপাদান ব্রণ দূর করতেও সাহায্য করবে। চোখের নিচে কালো দাগ থাকলে তাও দূর করবে বিটরুট।
বাতের ব্যথা কমায়: অনেকেই আছেন যারা দীর্ঘ দিন বাতের ব্যথায় ভুগছেন। এক্ষেত্রে তাদের জন্য সহায়ক একটি খাবার হতে পারে বিটরুট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাতের ব্যথায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য বিট খুবই উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত বিটরুট খাওয়ার ফলে প্রায় ৩৩ শতাংশ বাতের সমস্যা দূর হয়েছে। তাই একে হেলাফেলা করার সুযোগ নেই।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে: বিটরুটে থাকে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রেট। এই উপাদান শরীরে নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করে। যে কারণে রক্তনালী প্রসারিত হয়, কমে আসে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা। তাই যারা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য একটি উপকারী খাবার হতে পারে বিটরুট। এটি নিয়মিত খেলে আপনার জন্য রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়ে যাবে।
রক্ত পরিষ্কার করে: আমাদের শরীরের রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে বিটরুট। তাই আপনিও সুস্থ থাকতে চাইলে নিয়মিত বিটরুট খাওয়ার অভ্যাস করুন। এটি খেলে তা শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে, রক্তে বৃদ্ধি করে আরবিসি-র সংখ্যা, সেইসঙ্গে দূরে রাখে রক্তস্বল্পতাও।
হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: বিটরুট হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এতে থাকা নাইট্রেট হার্টের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। এতে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: বিটরুট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
বিটরুটের কিছু সাবধানতা
১. বিটরুটে নাইট্রেট থাকে, যা কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব বা ত্বকের লালচে ভাব সৃষ্টি করতে পারে।
২. বিটরুট খেলে প্রস্রাবের রঙ লাল হয়ে যেতে পারে। তবে, এটি কোনো ক্ষতিকর লক্ষণ নয়।
৩. যারা কিডনির সমস্যায় ভুগছেন, তাদের বিটরুট খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ডিবিসি/ এসএসএস