পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার এক মাদ্রাসার ৩ ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগে হাফেজ মিজানুর রহমান (৪২) নামে এক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে দেবীগঞ্জ থানা পুলিশ।
বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে উপজেলার পৌরসভার একটি মাদ্রাসা থেকে ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ঘটনায় বলাৎকারের শিকার এক মাদরাসা ছাত্রের বাবা বাদী হয়ে ওই শিক্ষককে আসামী করে বুধবার রাতেই দেবীগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। বৃহস্পতিবার(২৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে তাকে আদালতে তোলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে বলাৎকারের শিকার মাদরাসা ছাত্ররা ২২ ধারায় পুলিশের জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। অপর দুইজনকেও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নেয়া হবে বলে জানায় পুলিশ।বলাৎকারের শিকার অপর দুই ছাত্রের পরিবারের পক্ষ থেকে একই আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন দেবীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নজরুল ইসলাম।
তিনি আরও বলেন, মাদরাসার অপর তিন ছাত্রকে (১০-১২ বছর বয়সী) নিজ শয়নকক্ষে ডেকে নিয়ে তাদেরকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগটিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ বলে জানান তিনি।
গ্রেপ্তার হওয়া ওই মাদরাসা শিক্ষকের বাড়ি নীলফামারী সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ গোড় গ্রামে। তিনি দেবীগঞ্জ পৌরসভার মুন্সীপাড়া-কামাতপাড়া এলাকায় একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসায় প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত গত ৩ মাসে তিনজন ছাত্রকে (১৩-১৬ বছর বয়সী) বিভিন্ন সময়ে নিজ শয়নকক্ষে ডেকে নিয়ে বলাৎকার করেন মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান। এছাড়া একই সময়ে আরও তিন ছাত্রকে (১০-১২ বছর) তিনি নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে ওই মাদরাসা শিক্ষক যৌন নিপীড়ন করেছেন।
এ নিয়ে ছাত্রদের পরিবারের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার বলাৎকারের অভিযোগ পেয়ে বুধবার বিকেলে এক জরুরি সভা ডাকে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। পরে অভিযোগের প্রেক্ষিতে সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক অভিযুক্ত শিক্ষককে চাকরিচ্যুত হয়।
২ বছর আগেও এক ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগ ওঠে এই মাদারাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে। সেই সাথে ছাত্রদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে মারধর করে তিনি এই অপকর্ম করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই প্রধান বলেন, মাদ্রাসাটি ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর আবাসিক ও অনাবাসিক ব্যবস্থায় পাঠদান চালু করা হয়। শুরু থেকে আমরা মাদরাসায় মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ করি। তবে যেসব ছাত্ররা বলাৎকারের অভিযোগ এনেছেন শিক্ষক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে তারা সবাই গোপনে মোবাইল ব্যবহার করত। পরে বিষয়টি প্রধান শিক্ষকের নজরে এলে তিনি তাদের নিষেধ করেন। তবে ছাত্ররা সেই জের ধরে তাদের অভিভাবকের কাছে বলাৎকারের বিষয়টি নিয়ে নাটক সাজান। যদিও ছাত্রদের অভিভাবকদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা প্রধান শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করেছি। কিন্তু অল্প সময়ে ঘটনার প্রমাণ বের করা সম্ভব হয়নি। এরপরেও অভিভাবকেরা মাদরাসাটি ভাংচুর করতে আসেন। শুনতেছি হুজুরের বিরুদ্ধে নাকি মামলাও হচ্ছে। একজন হুজুরকে এভাবে অপমান করা ঠিক না।
দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার ইফতেখারুল মোকাদ্দেম বলেন, বর্তমানে মাদরাসা এলাকা শান্ত রয়েছে। মাদরাসাটি কয়েকদিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে, আর দুটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। আমরা ছাত্রদের জবানবন্দি নিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে একজনকে প্রেরণ করেছি। অপর দুইজনকেও পাঠানো হবে। তবে বলাৎকারের অভিযোগটির প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ডিবিসি/ এসএসএস