বর্তমানে বিশ্বে বেশকিছু একেবারে ছোট আকারের, স্বল্প জনসংখ্যার ডেডিকেটেড দেশ রয়েছে। তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং নাগরিক সেবার মান দেখলে একেবারে আশ্চর্য হতে হয়। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের একেবারে ছোট্ট দেশ কাতার এবং পূর্ব এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুরের নাম রয়েছে একেবারে সবার উপরে। বিশ্বের সেরা বিমানবন্দর, উন্নত ও নিরাপদ এয়ারলাইন্স পরিষেবা, একেবারে শূন্য কিংবা নিম্ন মাত্রায় দুর্নীতি ও ব্যাপক অর্থনৈতিক সক্ষমতার পাশাপাশি নাগরিক উন্নয়ন সূচকে সবার উপরে অবস্থান করছে।
বিগত কয়েক বছর থেকে পশ্চিমা বিশ্বের প্রোপাগান্ডা নিউজ এজেন্সির ব্যাপক অপপ্রচার সত্ত্বেও কাতারের পরিকল্পনামাফিক সার্বিক উন্নয়নকে কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারেনি। এমনকি গত ২০২২ সালে কাতারে অনুষ্ঠিত ফিফা বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট-২০২২ নিয়েও ব্যাপক অপপ্রচার এবং মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালায় পশ্চিমা বিশ্ব। তবে তাদের মুখে চুনকালি দিয়ে অত্যন্ত সুন্দর, নিরাপদ ও জাকজমকপূর্ণভাবে বিশ্বমানের ফুটবল খেলা উপহার দেয় কাতারের আল থানি সরকার।
তাছাড়া বৈশ্বিক মানবিক কাজের অংশ হিসেবে খরা ও অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত আফ্রিকা এবং এশিয়ার বেশকিছু দরিদ্র দেশকে বিপুল পরিমাণে আর্থিক ও জ্বালানি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে দেশটি।
আইএমএফ এর প্রতিবেদনের দেয়া তথ্যমতে, চলতি ২০২৪ সালের হিসেব অনুযায়ী বিশ্বের সর্বোচ্চ জিডিপি পার ক্যাপিটাল দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে মাত্র ১১,৫৮১ বর্গ কিলোমিটারের দেশ কাতার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর দেয়া তথ্যমতে, কাতারের মোট লোকসংখ্যা প্রায় ৩.০১ মিলিয়ন হলেও একবারে নিজস্ব দেশীয় আরব জনগোষ্ঠীর লোকসংখ্যা হতে পারে মাত্র প্রায় ১৩ লক্ষ বা তার কাছাকাছি। বর্তমানের কাতারের রাষ্ট্র প্রধান তামিম আল থানির যোগ্য নেতৃত্বে অত্যন্ত টেকসই অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জন করেছে দেশটি।
গাজায় ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসনের জেরে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিলেও কাতারের অর্থনীতি বড় ধরনের কোন সমস্যার সম্মুখীন হবে না বলেই মনে করে আইএমএফ। আইএমএফ এর দেয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২৪ সালে কাতারের নমিনাল জিডিপির আকার হবে ২৪৪.৬৯ বিলিয়ন ডলার ও জিডিপির হার ২.০% এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। তার পাশাপাশি দেশটির মাথাপিছু আয় (নমিনাল জিডিপি অনুযায়ী) ৮১,৪০০ ডলার নির্ধারণ করে আইএমএফ। তাছাড়া বর্তমানে প্রতি ডলারের বিপরীতে কাতারের মুদ্রা রিয়ালের মান ৩.৬৪ কিউআর নির্ধারণ করা হয়েছে এবং তা গত ৮ই অক্টোবর ২০২২ সালে ছিল ৩.৬৭৭৪ কিউআর।
কাতারের নেটিভ সিটিজেনের বেকারত্বের হারের সঠিক কোনো ডাটা পাওয়া সম্ভব না হলেও চলতি ২০২৪ সালের হিসেব অনুযায়ী দেশটির সার্বিক মুদ্রাস্ফীতির হার মাত্র ২.৬%। তাছাড়া উইকিপিডিয়ার দেয়া তথ্যমতে, চলতি ২০২৪ সালের ১ মার্চের হিসেব অনুযায়ী দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৬৪.৫৬ বিলিয়ন ডলার এবং গত ২০২৩ সালে মোট রপ্তানি আয় হয় প্রায় ৯৮ বিলিয়ন ডলার এবং গত ২০২২ সালে তা ছিল প্রায় ১১৯ বিলিয়ন ডলার। কাতার মূলত সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) রপ্তানি করে। তার পাশাপাশি পেট্রলিয়াম গুডস, সার এবং স্টিলও রপ্তানি করে।
বিশেষ করে গত ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের সারা বিশ্বে গ্যাস ও জ্বালানি তেল সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্থ হওয়ার ফলে হুহু করে বাড়তে থাকে লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) দাম। আর কাতার এশিয়া ও ইউরোপের বাজারে এলএনজি রপ্তানি করে গত ২০২২ সাল থেকে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়। যার ফলে খুব দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে কাতারের জাতীয় অর্থনীতি এবং বৈদেশিক বাণিজ্য। যার ধারাবাহিকতা এখনও পর্যন্ত টিকিয়ে রেখেছে দেশটি।
তাছাড়া যুক্তরাজ্যভিত্তিক টাইম হায়ার এডুকেশনের এশিয়ার সেরা ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং-এ একেবারে প্রথম সারিতে না থাকলেও মধ্যপ্রাচ্যের ছোট্ট দেশ কাতারের সেরা উচ্চস্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাতার ইউনিভার্সিটি রয়েছে ৫২-তম স্থানে। যা কিনা আধুনিক ও বিশ্বমানের শিক্ষা ব্যবস্থায় দেশটির শক্তিশালী অবস্থান বিশ্বের সামনে ফুটে উঠেছে। যদিও মধ্যপ্রাচ্যের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় সৌদি আরবের কিং ফাহাদ ইউনিভার্সিটি অব পেট্রোলিয়াম এন্ড মিনারেলস রয়েছে ৩৭-তম স্থানে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের খলিফা ইউনিভার্সিটি রয়েছে ৪০তম স্থানে।
তাছাড়া একাধিক বৈশ্বিক বিষয়ে মতানৈক্যের কারণে সৌদি জোটভুক্ত দেশগুলো একাধিকবার কাতারকে একঘরে করে দিয়েছিল। তবে তাতে কিন্তু দেশটিকে দমাতে পারেনি তারা। কাতার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জ্বালানিনির্ভর অর্থনীতি থেকে কিছুটা বেরিয়ে এসে বিভিন্ন বৈচিত্র্য যোগ করছে তাদের জাতীয় অর্থনীতিতে। যা তাদেরকে বিভিন্ন সংকটে সাবলীলভাবে টিকে থাকতে সহায়তা করেছে।
উদাহরণ হিসেবে কাতার এয়ারওয়েজ এবং হামাদ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের সাফল্যের কথা বলা যেতেই পারে। আবার আন্তর্জাতিক মিডিয়া ব্রান্ড হিসেবে কাতারের আল জাজিরা নিউজ এজেন্সি কিন্তু ইতোমধ্যেই সারা বিশ্বে নিজের যোগ্য স্থান করে নিয়েছে।
ডিবিসি/ এসএসএস