বাংলাদেশ, জাতীয়

ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বিভিন্ন জেলায় বন্যা, পানিবন্দী কয়েক লাখ মানুষ

নিউজ ডেস্ক

ডিবিসি নিউজ

বুধবার ২১শে আগস্ট ২০২৪ ০৮:৩০:০৫ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দেশের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন সড়ক ডুবে যাওয়ায় চরম সমস্যায় পড়েছেন বন্যাকবলিত মানুষেরা। একাধিক এলাকার বাড়ি-ঘর ডুবে গেছে। সবমিলিয়ে বন্যায় আক্রান্ত বিভিন্ন জেলার মানুষেরা সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন।

দেশের বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দেশের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। 

 

নোয়াখালী: জেলাটির মাইজদীতে হাঁটুপানি জমেছে। ৯ উপজেলার সবকটিতেই বসতঘর, গ্রামীণ সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন কয়েক লাখ মানুষ। এছাড়া চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এসব জায়গায় ডুবে গেছে আমন ধানের বীজতলা, শাক-সবজি খেত। মাঠে পানি বেশি থাকায় অনেক এলাকার কৃষক আমন ধান লাগাতে পারছেন না। ডুবে গেছে সড়ক, বাসাবাড়িতেও ঢুকছে পানি। পানি বৃদ্ধির কারণে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষসহ মৎস্যচাষিরা। ইতোমধ্যেই বেশকিছু মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে।

 

লক্ষ্মীপুর: জেলাটির রায়পুর উপজেলার মেঘনা নদীসংলগ্ন উত্তর চরবংশি ও চরআবাবিল ইউপির কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠায় স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের আগের ভাঙন স্থান দিয়ে পানি ঢুকে তৃতীয় দফায় পরশুরাম উপজেলায় প্রায় ৫৫টি গ্রাম ও ফুলগাজী উপজেলায় প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

 

খাগড়াছড়ি: সাজেক সড়কের কবাখালি এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ায় সাজেকের সঙ্গে সারা দেশের যান চলাচল বন্ধ হয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মৌলভীবাজার জেলার ৪টি নদ-নদীতে বিপৎসীমার উপরে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

 

ফেনী: পরশুরাম পৌরসভা ও তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ৫৫টি গ্রাম এবং ফুলগাজী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ৩৫টি গ্রামসহ অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর পানি পরশুরাম ও ফুলগাজী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চলতি বছরের ১ জুলাই প্রথম দফা ও ২ আগস্ট দ্বিতীয় দফা মুহুরী-কুহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন দিয়ে পানি ঢুকে দুই উপজেলার শত শত গ্রাম প্লাবিত হয়।

কমলনগরে পচে গেছে ৯৭৬ হেক্টর জমির আমন ধানের বীজতলা। বীজ সংকটের কারণে নতুন বীজতলাও তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না।

 

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর): চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকা ও গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। মাছের ঘের, জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক, বসতবাড়ি, কৃষি আবাদ, পোলট্রি খামার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিতে প্লাবিত হয়েছে। গাছপালা ভেঙে পড়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ।

 

মীরসরাই (চট্টগ্রাম): পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন মীরসরাইয়ের সহস্রাধিক পরিবার। বৃষ্টির পানি জমে ঘরবাড়ি ভাঙনের ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তারা। উপজেলার খৈয়াছড়া, মীরসরাই, মঘাদিয়া, মিঠানালা, করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট পৌরসভা, মীরসরাই পৌরসভার নিম্নাঞ্চল, জোরারগঞ্জ, কাটাছরা, দুর্গাপুর, ওসমানপুর ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।

 

নাঙ্গলকোট ও চান্দিনা (কুমিল্লা): বন্যায় তলিয়ে গেছে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের অনেক রাস্তাঘাট। পৌর সদরসহ গ্রামগঞ্জে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এতে নিম্নাঞ্চল, নদী অঞ্চল, স্কুল, মাদ্রাসা ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে ঘরে ঢুকে পড়েছে পানি। চান্দিনা উপজেলা সদরের ৩টি খেলার মাঠ পানিতে ডুবে গেছে।

 

খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়িতে চেঙ্গী ও মাইনি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পুরো জেলায় অন্তত ৫০টির বেশি গ্রামে পানি উঠেছে। গত দুই মাসের ব্যবধানে তিনবার পানি ঢুকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন শহরতলী ও পৌর এলাকার নদী পাড়ে বসবাসকারী লোকজন। এসব এলাকার বাসিন্দারা স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন। 

 

বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মেরুং ইউনিয়ন। খাগড়াছড়ি-লংগদু সড়কের মেরুং হেডকোর্য়ার্টার এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ায় রাঙামাটির লংগদুর সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

 

রাঙামাটি: জেলাটির বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন সড়কে ধস হওয়ায় সাময়িকভাবে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। রাঙামাটি শহরের পাহাড় ধসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। পাহাড়ের ঢালে ও পাদদেশে বসবাসকারী ঝুঁকিপূর্ণ লোকজনকে নিরাপদ স্থানে বা আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়ে শহরে মাইকিং করে সতর্কবার্তা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। জেলাটিতে টানা ৫ দিন ধরে থেমে থেমে মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে শহরসহ জেলায় পাহাড় ধস ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

 

ভোলা: ভারী বৃষ্টিতে জেলাটিতে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। মঙ্গলবার সকালে বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তেমন ছিল না। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে। এদিকে মেঘনা নদীতে পানির চাপ বাড়ায় উত্তাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে। জোয়ারে ডুবে গেছে ফেরিঘাট।

 

মৌলভীবাজার: জেলার কুশিয়ারা, মনু, ধলাই ও জুড়ী নদে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলার মনু, ধলাই ও জুড়ী নদে পানি বেড়ে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মনু নদের রেলওয়ে ব্রিজে বিপদসীমার ১৫ সেমি., চাঁদনীঘাটে ১৩ সেমি., জুড়ী নদে ১৫১ সেমি. ও ধলাই নদে বিপৎসীমার ৩৩ সেমি. উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ধলাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৩টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বড়লেখা-কুলাউড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রাবিহত হচ্ছে। এতে সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

 

চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ): পানিতে তলিয়ে গেছে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের কমপক্ষে ২০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল ও রাস্তাঘাট। খোয়াই নদীর পানি বাল্লা পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া খোয়াই ও করাঙ্গী নদীর পানি উপচে বন্যা প্লাবিত হয়েছে অনেক গ্রাম।

 

ডিবিসি/কেএলডি

আরও পড়ুন