জুমার নামাজের বয়ানে সুদ-ঘুষের বিরুদ্ধে বয়ান করায় মাওলানা হাসান মুরাদ নামের এক ইমামকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় ইউনিয়ন সদস্যের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত মসজিদের সাধারণ সম্পাদক পেশায় একজন শিক্ষক। এদিকে মসজিদের একজন ইমামকে এভাবে মারধরের ঘটনায় স্থানীয় মুসুল্লিদের মাঝে ক্ষোভ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ভুক্তভোগী ওই ইমাম কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার এতবারপুর ইউনিয়নের বানিয়াচং গ্রামের খন্দকার বাড়ী জামে মসজিদে কর্মরত রয়েছেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, শনিবার (১লা মার্চ) দুপুরে মসজিদ সংলগ্ন রুমে অবস্থানকালে স্থানীয় মেম্বার ও তার ভাইকে নিয়ে ইমামের উপর হামলা করেন মসজিদের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম। এ ঘটনার জেরে ইমামের সমর্থকরাও অভিযুক্তদের ঘর ভাঙচুর করেন বলে স্থানীয়রা উল্লেখ করেন।
জানা যায়, ওই মসজিদের ইমাম একজন ইসলামী বক্তা। তিনি মসজিদের ইমামতির পাশাপাশি বিভিন্ন মাহফিলে বয়ান করেন। প্রতি শুক্রবার খুৎবায় সুদ ও ঘুষের বিরুদ্ধে এবং ইমান ও সুন্নী আকিদা প্রতিষ্ঠায় বয়ান করেন। এসব বয়ানে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে ওই মসজিদ থেকে তাড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন এলাকার এক ইউপি মেম্বার ও মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু স্থানীয় মুসল্লীরা তার বয়ানে সন্তুষ্ট এবং তাকে মসজিদ থেকে বিতারিত না করার পক্ষে অবস্থান নেন।
এরই প্রেক্ষিতে শনিবার দুপুরে ইমাম হাসান মুরাদের সঙ্গে তর্কে জড়ায় তারা। একটা সময়ে ক্ষিপ্ত হয়ে মসজিদের মাইকের স্ট্যান্ড দিয়ে ইমামকে মারধর করেন তারা। এরপর রক্তাক্ত অবস্থায় ইমামকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। এদিকে এ ঘটনার পর ইমামের সমর্থনকারীরা মসজিদের সাধারণ সম্পদক শিক্ষক নুরুল ইসলামের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করেন। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
আহত ইমাম মো. হাসান মুরাদ বলেন, আমি সুন্নী আকিদা বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি সুদ ও ঘুষের বিরুদ্ধে কথা বলি। আর এটাকে কোনো ভাবেই মানতে পারছে না হাতেগোনা কয়েকজন মানুষ। এলাকার সিংহভাগ মুসল্লী আমার পক্ষে থাকলেও হাতেগোনা কয়েকজন আমার বক্তব্যসহ আমাকে সহ্য করতে পারছে না। এ সময়ে তিনি অভিযোগ করেন যে, তাকে মারধরের সময়ে তার রুম থেকে নগদ ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে যায় তারা।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত মসজিদের সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম জানান, ওই ইমামকে এলাকার বেশ কিছু মানুষ ভালভাবে গ্রহণ করছে না। মুসল্লীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে মসজিদ থেকে বের করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তাকে তারা বুঝিয়ে বিদায় করতে গেলে ইমাম তার চোখে আঘাত করে এবং ইমামের সমর্থকরা তার বাড়ি ভাঙচুর করে।
চান্দিনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নাজমুল হুদা জানান, ইমামকে মারধর ও বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় উভয় পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। এলাকার প্রতিনিধিরা দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধান করার কথা বললেও এখনো সমাধান হয়নি।
ডিবিসি/কেএলডি