বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশে ব্যবহৃত চীনের তৈরি F-7 যুদ্ধবিমানকে কেন্দ্র করে প্রায়ই দুর্ঘটনার খবর শোনা যায়। যার সর্বশেষ উদাহরণ ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল। সোমবার স্কুল ভবনটির ছাদে বিধ্বস্ত হয় F-7 BGI মডেলের একটি বিমান। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় ২০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। হতাহতের সংখ্যা বাড়ার শঙ্কা করছেন সবাই। যার ফলে প্রশ্ন উঠেছে, কেন বারবার দুর্ঘটনায় পড়ছে এই যুদ্ধবিমানটি?
F-7 বা Chengdu F-7 হচ্ছে চীনের তৈরি একটি লাইট ওয়েট সুপারসোনিক ফাইটার জেট, যা মূলত সোভিয়েত ইউনিয়নের MiG-21 এর লাইসেন্স ভিত্তিক সংস্করণ। ১৯৬০-এর দশক থেকে এটি উৎপাদন শুরু হয় এবং চীন সহ একাধিক উন্নয়নশীল দেশ এটি তাদের বিমান বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী এটি বিশেষভাবে একটি ব্যয়সাশ্রয়ী মাল্টি-রোল যুদ্ধবিমান হিসেবে ডিজাইন করা হয়েছে। চেংডুর তৈরি এফ সিরিজের বিমানগুলোর মধ্যে এটিকে সবচেয়ে উন্নত সংস্করণ বলে গণ্য করা হয়। এফ-৭ বিজি-তে, জে-৭ জি বিমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করেই তৈরি করা F-7 BGI (I বলতে বুঝানো হয় Improved বা উন্নত)।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ১৯৮০-এর দশকে এই বিমান সংগ্রহ করে। যদিও বিমান বাহিনীতে এর আধুনিক সংস্করণ, যেমন F-7 BGI ব্যবহার করা হয়, তবে এর মূল নকশাটি বেশ পুরোনো। পুরোনো ডিজাইনের এয়ারফ্রেম এবং আধুনিক ফ্লাইট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অভাব দুর্ঘটনার একটি প্রধান কারণ হতে পারে। নতুন প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের তুলনায় এর দুর্ঘটনার হার তুলনামূলকভাবে বেশি। F-7 যুদ্ধবিমানের ডিজাইন ১৯৫০-৬০ দশকের। আধুনিক যুদ্ধবিমানের তুলনায় এর প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য অনেকটাই পিছিয়ে। আজকের দ্রুতগতির, মাল্টিরোল ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধ সক্ষম ফাইটার জেটের তুলনায় এটি বেশ সীমাবদ্ধ।
এছাড়া, পুরোনো যুদ্ধবিমান রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উন্নত প্রযুক্তি ও দক্ষ জনবল প্রয়োজন। অনেক সময় খুচরা যন্ত্রাংশ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, বা ব্যবহার হয় পুরনো যন্ত্রাংশ। এতে যান্ত্রিক ত্রুটির ঝুঁকি বাড়ে। এটি পুরনো নকশা ভিত্তিক বিমান। মিগ-২১ এর ১৯৫০–৬০-এর দশকের ডিজাইনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। যদিও আধুনিকায়িত (ডাবল ডেল্টা উইং) তবুও এটির এরোডাইনামিক পারফরম্যান্স আধুনিক চতুর্থ প্রজন্মের জেটের তুলনায় বেশ পিছিয়ে। ফলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেকখানি।
যদিও বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে পাইলটদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তবে পুরনো বিমান চালাতে এক ধরনের অতিরিক্ত সতর্কতা ও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। নতুন প্রযুক্তির জেটের সাথে সমন্বয় করতে গিয়ে কখনও কখনও এই পুরনো বিমানগুলো পাইলটদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার, জ্যামিং বা সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্সের দিক থেকে এরা বেশ দুর্বল।
প্রত্যেক যুদ্ধবিমানেরই নির্দিষ্ট উড়ান ঘণ্টার সীমা থাকে, যা পেরিয়ে গেলে তা ব্যবহারের ঝুঁকি বাড়ে। অনেক সময় সীমাবদ্ধ বাজেটের কারণে পুরনো বিমানগুলোই ব্যবহার করা হয় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে, যা দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়ায়। একমাত্র ইঞ্জিনের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় যান্ত্রিক ত্রুটির সময় বিকল্প ইঞ্জিন না থাকাটাও নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
ডিবিসি/এফএইচআর