বাংলাদেশে অনলাইনভিত্তিক ক্যাসিনো ব্যবসার মূল হোতা হিসেবে নাম এসেছে সেলিম প্রধান এর। থাইল্যান্ডে বসেই সেলিম জুয়ার কারবার চালাতেন। প্রয়োজনে আসতেন দেশেও। গত সোমবার বিমানবন্দরে ফ্লাইট থেকে তাকে গ্রেপ্তারের পর তার অপরাধ সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে।
'অনলাইন ক্যাসিনো গুরু' সেলিম প্রধানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সোমবার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে তিনি বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এ সময় থাই এয়ারওয়েজের ব্যাংককগামী একটি ফ্লাইট থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে নামিয়ে আনা হয়।
থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩২২ নম্বর ফ্লাইটটি দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে ব্যাংককের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি ইউনিট ফ্লাইটে হাজির হলে সেটি বেলা ৩টায় ঢাকা ছেড়ে যায়। সেখান থেকেই সেলিম প্রধানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কে এই সেলিম প্রধান?
সেলিম প্রধান অনলাইনে ক্যাসিনো পরিচালনাকারী এবং বাংলাদেশের কান্ট্রি প্রধান। তিনি ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সহসভাপতি। সেলিম প্রধানের বাবার নাম হান্নান প্রধান। ঢাকার মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডে তার বাসা। তার গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ।
সেলিমের ক্যাসিনো ব্যবসা সম্পর্কে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) তোফায়েল মোস্তফা সারওয়ার জানান, অনলাইনে কয়েন বিক্রি করে ক্যাসিনো খেলায় জুয়াড়িদের উদ্বুদ্ধ করতেন সেলিম প্রধান। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খুলেছিলেন তার গোপন ক্যাসিনো। ক্যাসিনো থেকে অর্জিত বিপুল পরিমাণ অর্থ তিনি বিভিন্নভাবে বিদেশে পাচার করেছেন।
গুলশানে তার মালিকানাধীন একটি স্পা সেন্টার রয়েছে। সেখানে চলে অনৈতিক কাজ। সেখানে রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের লোকজনের যাতায়াতও রয়েছে।
এদিকে, গ্রেপ্তার হওয়া বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার ক্যাশিয়ার ছিলেন সেলিম প্রধান। এই দুজন মিলে মতিঝিল ও গুলশান এলাকায় ক্যাসিনো ব্যবসা করতেন।
পশুর খাটালে চাঁদাবাজি, হোটেল, স্পা, ক্যাসিনো পরিচালনাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে সেলিমের বিরুদ্ধে। অনলাইনে কয়েন বিক্রি করে তিনি ঢাকায় ক্যাসিনো চালাতেন। এসব করে তিনি গড়েছেন টাকার পাহাড়।
থাইল্যান্ডের পাতায়াতেও রয়েছে তার ক্যাসিনো ব্যবসা। ব্যাংককে বিলাসবহুল হোটেল, ডিসকো বারসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনি।
সূত্র জানায়, রাজধানীর বিভিন্ন স্পা ও বিউটি পার্লার যেখানে ভিআইপিদের আসা-যাওয়া রয়েছে, সেগুলোতে নারী সরবরাহের কাজ করতেন সেলিম। সেই মেয়েরা ভিআইপিদের বিনোদন দেয়ার কাজ করতেন। সিলেট থেকে অবৈধভাবে পাথর নিষ্কাশনের কাজ করতেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, চোরাই কারবার করতে গিয়েই চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর গ্রামের এক সময়ের ভাটা শ্রমিক কেনাল আলীর সঙ্গে পরিচয় হয় সেলিমের। ভাটা শ্রমিক কেনাল হঠাৎ করেই সীমান্তে ভারতীয় গরু-মহিষ থেকে চাঁদা তোলা শুরু করেন।স্থানীয় প্রশাসনও তাকে এই কাজে সহযোগিতা করতে থাকেন। একপর্যায়ে কেনালই হয়ে ওঠে সীমান্তের ডন। এই চাঁদা তোলার কাজে সে সহযোগী হিসেবে বেছে নেন কালুপুর গ্রামের রুবেল আলী ও বিস্ফোরক মামলার আসামি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের আবদুল খালেককে। এই তিনজনের সিন্ডিকেট চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে খাটালে আসা গরু-মহিষের জোড়ায় ১৯ হাজার ৫০০ টাকা করে চাঁদা তোলা শুরু করেন। সোমবারও এই অঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্তে কেনাল সিন্ডিকেট চাঁদা তুলেছেন বলে জানিয়েছেন গরু ব্যবসায়ীরা।