অপরাধ, রাজধানী

এখনও কাঠালবাগানের ভাড়াটিয়াকে বাসায় তোলেনি বাড়ি মালিক

শামীম আহমেদ

ডিবিসি নিউজ

সোমবার ২০শে এপ্রিল ২০২০ ০১:২২:১২ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

এক মাসের ভাড়া বাকির অভিযোগে ঝড়ের রাতে বাসা থেকে বের করে দেয়া কাঠালবাগানের ভাড়াটিয়াকে এখনো বাসায় তোলেনি বাড়ি মালিক।

রবিবার (১৯শে এপ্রিল) র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা কয়েকদফা চেষ্টা করলে উল্টো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেখে নেয়ার হুমকির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী পরিবারটি কলাবাগান থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ বলছে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শনিবার (১৮ই এপ্রিল) রাত ৯টায় ট্রিপল নাইনে ফোন-এক নারীর অভিযোগ তার বাসায় লুটপাট করছে ভাড়াটিয়া। তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে উল্টো চিত্র দেখতে পায় পুলিশ। ১ মাসের বাড়িভাড়া দিতে না পারায় ভাড়াটিয়াকে বাড়ি থেকে বের করতেই নাটক সাজান বাড়িওয়ালা। পুলিশ ঝড়ের রাতে পরিবারটিকে বাড়ি থেকে বের না করার আহ্বান জানালেও মানতে নারাজ বাড়িওয়ালা।

পুলিশ চলে গেলে রাত সাড়ে ১০টায় জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। ভাড়ার টাকা ছাড়া বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়। বাধ্য হয়ে বাড্ডায় এক আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেয় পরিবারটি।

ভুক্তভোগী ওই পরিবারের নারী সদস্য বলেন, 'উনি একমাসের ভাড়া পাবে, এটার জন্য তিনি চিল্লাচিল্লি করে গেছে। আমি বলসি, এই অবস্থার মধ্যে আমি টাকা দিতে পারবো না। উনি বললো টাকা দিতে না পারলে বাসা থেকে বের হয়ে যাও। তারপর পুলিশকে ফোন দিসে. পরে পুলিশ আসছে। তারপর তাদের বলছে, তাকে হুমকি দিতেসে, তাকে গেটে লাগাতে দিচ্ছেনা। বলে, আমার হাজবেন্ড নাকি নেশা করে, মাদক বেচে আর আমি নাকি এটার ই করি।'

ভুক্তভোগীর অভিযোগ বাসায় ওঠার পর থেকেই নানারকম নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে তাদের।

ভুক্তভোগী ওই পরিবারের পুরুষ সদস্য জানান, 'চার-পাঁচদিন আগে থেকেই ভাড়ার জন্য চাপ দিতেসে। একটু পরপর এটা চাইতেসে। ভাড়াও চাইতেসে, সাথে খাবারও চাইতেসে।'

ভুক্তভোগী ওই পরিবারের নারী সদস্য আরও বলেন, 'উনারা পাঁচজন লোক কখনও বাসায় ভাত রেঁধে খেতো না। আমার বাসাতেই খেতো। বলে হয় টাকা দে, নয় ঘর তালা মারমু। তার চার ছেলেসহ ৫ জন আমারে খুব টর্চার করসে। আমরা স্বামী-স্ত্রী বাচ্চা নিয়ে ভ্যানের ওপর রাত কাটাইসি।'

রবিবার (১৯শে এপ্রিল), পরিবারটিকে নিয়ে আবারো কাঁঠালবাগানের ওই বাসায় যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে কয়েক ঘণ্টা চেষ্টার পরও বাড়িওয়ালাকে পাওয়া যায়নি। উল্টো ফোনে হুমকি দেন তিনি। বাড়িওয়ালা শম্পা বলেন, 'আপনাকে এতক্ষণ অনেক রিকোয়েস্ট করসি। দরকার হলে আপনি গাড়ি নিয়ে আসেন, আমরা সায়েদাবাদ বসে কথা বলি। আমি কলাবাগান থানায় কথায় বলে আসছি। আমি আজ পর্যন্ত ওসি, ডিসি এদের সাথে দেখা করসি-কথা বলছি। আপনাকে বাঁচাইতে বলসে তাইনা, আপনি বাঁচাবেন? আমি আমার বাড়ি-ঘর এগুলো দিয়ে দিবো, আমি আসবো না। শুনেন, সব কিছুর একটা শেষ আছে। এটা মনে রাইখেন। আপনার যা ক্ষমতা আছে করতে থাকেন।'

র‌্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর আরেফিন বলেন, 'বাড়িওয়ালা ইচ্ছে করে এমন আচরণ করছে যেন এই ব্যাপারটাতে আমরা পদক্ষেপ নিতে না পারি। উনার সহযোগিতা আমরা পাচ্ছিনা। বেশ কয়েকবার কল কেটে দিয়েছেন। এবং বেশ উদ্ধত আচরণ করেছেন মোবাইলে। আমরা এখানে দুপুর থেকে অপেক্ষা করছি তার জন্য। আমরা তার পজিটিভ সাড়া পাচ্ছিনা।'

পরে রাতে কলাবাগান থানায় গিয়ে মামলা করে ওই পরিবার।

নিউমার্কেট জোনের সহকারি কমিশনার আবুল হাসান বলেন, 'শম্পা নামে একজন মহিলা ৯৯৯ নাম্বারে আমাতের ফোন করে বলেন উনার বাসায় নাকি ভাঙচুর হচ্ছে। আরও বলেন ডাকাতি হচ্ছে এবং এর ভিডিও তার কাছে আছে। পরে, তিনি যে ভিডিও সরবরাহ করেন এতে সেরকম কোন তথ্যই পাওয়া যায়নি। এটা মিথ্যে ছিলো। ভিকটিম যদি মনে করেন তার নিরাপদ হেফাজত দরকার আমরা পূর্ণাঙ্গভাবে সেটার ব্যবস্থা করবো।'

বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ করেছে এলাকার বাসিন্দারাও। এক এলাকাবাসী বলেন, 'উনি যেভাবে চলে এটা গ্রহণযোগ্য না। উনার মত জঘন্য মহিলা যেন আল্লাহ কারও ঘরে না দেয়। এরকম মহিলা সারা বাংলাদেশে পাইনি। উনি সবার ওপর জুলুম করে। এখনও অনেক গরীব মানুষ আছে যাদের ঘর তালা মারা। ভিতরে মাল আটকে রাখসে। আপনার ঘরের খাবার নিয়ে সে খেয়ে ফেলবে, রান্না করবেনা। সে জামাইরে প্রতিদিন মারে।'

পরিবারটিকে আপাতত থাকার ব্যবস্থাসহ কয়েকদিনের খাদ্য সহায়তা দিয়েছে পুলিশ।

আরও পড়ুন