আমেরিকায় করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুধু অর্থনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনকেই প্রভাবিত করেনি একইসঙ্গে এ রোগের বিস্তার দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনেও উত্তাপ ছড়িয়েছে।
এ ভাইরাসের বিস্তার ও তা মোকাবেলার ধরনকে কেন্দ্র করে হোয়াইট হাউজ ও কংগ্রেসের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ শুরু হয়েছে।
মার্কিন কংগ্রেসের আইন প্রণেতারা মনে করেন, প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে করোনা ভাইরাস মোকাবেলার জন্য জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। অথচ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থে করোনা মোকাবেলা সংক্রান্ত কার্যক্রম বন্ধ কোরে যত দ্রুত সম্ভব মার্কিন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার ওপর জোর দিচ্ছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অন লাইনে এক সংবাদ সম্মেলনে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর জন্য আমেরিকায় দীর্ঘ মেয়াদে ছুটি এবং প্রতিটি ঘরকে কোয়ারান্টাইন করার পরিণতির ব্যাপারে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'দীর্ঘ সময়ের জন্য একটি দেশের সরকারি ছুটি ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনবে। তাই সিদ্ধান্ত আপনাদেরকেই নিতে হবে।
আমেরিকায় প্রতি বছর ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে কিন্তু তাই বলে আমরা কখনো ছুটি ঘোষণা করিনি। তাই আমি চাই করোনার প্রাদুর্ভাব সত্বেও আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সব কিছু খোলা থাকবে।' প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনা ও ইনফ্লুয়েঞ্জায় মৃত্যুর পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেছেন, এরপরও কখনো সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়নি।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার এ বক্তব্যের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বিপদের বিষয়টিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছেন। তিনি এ ভাইরাসকে সড়ক দুর্ঘটনার মতোই সাধারণ একটি সাধারণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করছেন। ট্রাম্পের এ ধরণের বক্তব্যের কারণে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান উভয় দলের নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রিপাবলিকান দলের সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম এক টুইট বার্তায় করোনা ভাইরাসকে গুরুত্বের সাথে না নেয়ার পরিণতির ব্যাপারে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।
কংগ্রেসের অন্যান্য কর্মকর্তারাও সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছেন। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের প্রধান ন্যান্সি পেলোসি এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, বহু মানুষ এ পর্যন্ত অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ক্ষতির মাত্রা হবে আরো বেশি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমালোচকরা বলছেন, আমেরিকার বিতর্কিত এ প্রেসিডেন্ট 'আমেরিকার স্বার্থই সবার আগে' এমন শ্লোগান থেকে সরে এসে এখন তিনি কেবল নিজের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। এমনকি তিনি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকেও তোয়াক্কা করছেন না। করোনা ভাইরাসে আমেরিকার ২০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হতে পারে এবং দেশটির অর্থনীতিতে নজিরবিহীন ধস নামতে পারে।