জাতীয়, জেলার সংবাদ, কৃষি

শীতকালীন সবজি চাষে কৃষকদের ভাগ্য বদল

এ.কে.সাজু, নওগাঁ

ডিবিসি নিউজ

মঙ্গলবার ৫ই নভেম্বর ২০১৯ ০১:১২:০১ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

নওগাঁয় বদলগাছী উপজেলায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষ বদলে দিয়েছে বহু কৃষকের ভাগ্য।

এ বছর আশানুরূপ দামের থেকেও বেশি দাম পাওয়ায় কৃষকরাও খুশি, তাই বেশি করে সবজি চাষে ঝুকছে এ উপজেলার কৃষকরা। উৎপাদিত ফসল বিক্রি করেই এখন কৃষক ঘরে তুলছেন নগদ অর্থ।

এই শীত মৌসুমে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা আগ্রহের সঙ্গে ট্রাকে করে লাখ লাখ টাকার ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, কুমড়া, সিম, লাউ, বরবটি,পালং শাক ও লাল শাকসহ বিভিন্ন সবজি নিয়ে যাচ্ছেন।

এ উপজেলার অনেক কৃষক শীতকলীন সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।উপজেলার কোলা ইউনিয়নের আবুল হোসেন তাদের মধ্যে একজন। তাছাড়া কোলা বাজার এলাকার সফিাত, সুমুন, দুদু মিয়া ও দোলন হোসেন জানান, জীবন যুদ্ধের তাগিদে তারা সম্পৃক্ত হন কৃষিকাজে। কৃষি কাজ নিয়েই চলছে তাদের জীবনের সংগ্রাম। 

অপরদিরক, সুমুন হোসেনও অনেক চিন্তা-ভাবনার পর শুরু করেন সবজি চাষ। আর এই সবজি চাষের বদলৌতে বদলেগেছে তার ভাগ্য। এখন তার পরিবারের আর্থিক কষ্ট অনেকটা কমে গেছে। গত বছর শীত মৌসুমে ৩ বিঘা জমিতে তিনি সবজি চাষ করে প্রায় ৩ লাখ টাকা আয় করেন তিনি। এ বছর তিনি সবজি চাষ করেছেন সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে।

আধাইপুর ইউনিয়নের লৎফর মিয়া জানান, গত বছর ১০ কাঠা জমিতে টমেটো চাষ করে প্রায় ৫৫ হাজার টাকা আয় করেছেন। ফলে এবছরও একই আবাদ করছেন। কিছু দিনের মধ্যে বিক্রিয়ও শুরু করবেন। তার চোখে এখন রঙিন স্বপ্ন। গত বারের চেয়ে এবার দামও অনেক বেশি। আশা করছেন আগের বছরের চেয়ে  এবার আরো বেশি লাভ হবে।

পাহাড়পুর ইউনিয়নের রফিকুল জানান, ৬/৭ বছর আগে রবিশস্য চাষাবাদ করতেন তিনি। তাতে খরচই উঠত না। কষ্টে করে দিন কাটত তাদের। সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকতো। অনেক ভেবে চিন্তে শুরু করেন লাউ চাষ। লাউ চাষের শুরুতেই আসে তার সফলতা। এরপর আর পেছনে ফিরে দেখতে হয়নি তাকে। চলতি বছরে ১ বিঘা জমিতে লাউ চাষ করেছেন তিনি। লাউ চাষে মাচা তৈরি সহ তার খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। তিনি এ পর্যন্ত ঐ ক্ষেত থেকে লাউ বিক্রি করে পেয়েছেন ৫৫ হাজার টাকা । আরও ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। 

এই উপজেলার সিম চাষী লইম বলেন, "আমি এ বছর ১ বিঘা জমিতে আগাম সিম চাষ করেছি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার টাকার সিম বিক্রয় করেছি। সেই টাকা দিয়ে আমি ১টি গরু ক্রয় করেছি।"

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে অন্যান্য সবজি চাষের পাশাপাশি ব্যাপকভাবে চাষ হয়েছে বাঁধা কপি ও ফুল কপি। স্থানীয় কৃষক রমজান  জানান, এক ১ বিঘা জমিতে বাঁধা কপি চাষ করতে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। আর এই বাঁধা কপি তিনি বিক্রয় করছেন প্রতি পিচ ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে। এক বিঘা জমি থেকে প্রায় চার-পাঁচ হাজার বাঁধা কপি বিক্রয় করা যায়। সব মিলে তার  লাভ থাকবে ১ লাখ থেকে ১লক্ষ ২০ হাজার টাকা।

সরজমিনে স্থানীয় বাজার ঘুরে দেখা যায়,  প্রতি কেজি নতুন গাজর ১৫০ টাকা, সিম ৮০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০/৫০ টাকা, ফুলকপি ২৫/৩০ টাকা, ওলকপি ৪৫ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, পটোল ৪০ টাকা, বেগুন ৪০টাকা, বরবটি ৪০, লাল শাক ৬০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, শসা ৩০/৪০ টাকা, টমেটো ৮০/১০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০/৮০ টাকা, পালং শাক ৬০/৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার হাসান আলী জানান, এ বছর এখন পর্যন্ত উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২ হাজার একর জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে। সবজি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে তারা বিভিন্ন ভাবে পরামর্শ দিয়ে আসছেন।

তিনি আরও বলেন, "বাজারে সবজির দাম ভালো থাকায় এলাকার কৃষকরা সবজি চাষ আরও বেশী করে চাষাবাদ করছেন। এবছর আরোও  প্রায় ৩ হাজার একর জমিতে সবজি চাষাবাদ বৃদ্ধি পাবে।"


আরও পড়ুন