জাতীয়

অকুতোভয় সৈনিক বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ

আকরাম হোসেন

ডিবিসি নিউজ

রবিবার ৬ই ডিসেম্বর ২০২০ ০৭:১৮:২৩ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের জন্য নূর মোহাম্মদ শেখকে ভূষিত করা হয় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে।

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। নয় মাস যুদ্ধ করে ডিসেম্বরের ১৬ তারিখে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল বীরযোদ্ধারা। তাদের মধ্যে আত্মত্যাগের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী ৭জনকে দেয়া হয় বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতস্বরূপ যে সাতজন বীরকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয় নূর মোহাম্মদ শেখ তাদের অন্যতম।

১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল জেলার মহিষখোলা গ্রামে জন্ম নেন নূর মোহাম্মদ শেখ। ছিলেন বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। ভালবাসতেন গান-বাজনা-নাটক-থিয়েটার। স্কুলের গন্ডি পার করে গান-বাজনায় মেতে থাকতেন তিনি।

যুবক নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৫৯ এ পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস বা ইপিআর-এ যোগদেন। ১৯৭০ এ তিনি ল্যান্স নায়েকে পদে উন্নিত হন। তখন তার কর্মস্থল হয় যশোর সেক্টর। ১৯৭১ সালের মার্চে ছিলেন ছুটিতে, গ্রামের বাড়িতে। বঙ্গবন্ধু ডাক দেন স্বাধীনতা। দেশ স্বাধীনের ডাকে সাড়া দিঢে ছুটিতে থাকা অবস্থায় যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে, ৮নং সেক্টরে।

১৯৭১- এর ৫ সেপ্টেম্বর। নূর মোহাম্মদকে অধিনায়ক করে পাঁচ জনের সদস্যের টহল দলের দায়িত্ব পড়ে যশোর জেলার গোয়ালহাটি গ্রামে পাকিস্তানি সেনা ক্যম্পের দিকে নজর রাখার। সেদিন সকালে হঠাৎ পাক সেনারা তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে গুলিবর্ষন করতে থাকে। পেছনে মুক্তিযোদ্ধাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষা থেকে পাল্টা গুলিবর্ষন করা হয়। তবু নূর মোহম্মদের দলকে উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। এক সময়ে সহযোদ্ধা সিপাহী নান্নু মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে নূর মোহাম্মদ তাকে কাঁধে তুলে নেন এবং হাতের এল.এম.জি দিয়ে গুলি চালাতে শুরু করলে শত্রুপক্ষ পেছনে সরতে বাধ্য হয়।

কিন্তু হঠাৎ করেই শত্রুর মর্টারের একটি গোলা এসে লাগে তাঁর ডান কাঁধে। গুরুতর আহত হন তিনি। কিন্তু তাঁকে বহন করে নিয়ে যেতে গেলে সবাই মারা পড়বে এই আশঙ্কায় নূর মোহাম্মদ শেখ রণক্ষেত্র ত্যাগ করতে রাজি হলেন না। বাকিদের অধিনায়োকোচিত আদেশ দিলেন তাঁকে রেখে চলে যেতে।

মৃত্যু নিশ্চিত জেনে সহযোদ্ধাদের বাঁচাতে একাই শেষ লড়াই চালিয়ে যান এই বীর যোদ্ধা। এক পর্যায়ে পাক সেনারা তাকে খুঁজে পায়, শরীরের বিভিন্ন অংশে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে তাকে হত্যা করে। ভয়াবহ সেই স্মৃতি এখনো তাড়া করে প্রত্যক্ষদর্শীদের।

এই বীরসেনানীকে পরবর্তীতে যশোরের কাশিপুর গ্রামে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কাছেই সমাহিত করা হয়। সেখানেই নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ স্মৃতিস্তম্ভ।
 
যতদিন থাকবে বাংলাদেশ, ততদিন বাংলার এই সূর্যসন্তানরা থাকবেন দেশের মানুষের হৃদয়ে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।  

আরও পড়ুন