জাতীয়, শিক্ষা

আবরার হত্যাকাণ্ড: বুয়েট শিক্ষার্থীদের ১০ দফা

ময়ূখ

ডিবিসি নিউজ

বুধবার ৯ই অক্টোবর ২০১৯ ০১:৪৫:০১ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়- বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছেই; সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা তুলে ধরেছেন ১০ দফা দাবি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার, হলে হলে নির্যাতন বন্ধ, হল প্রভোস্টকে অব্যাহতিসহ ১০ দফা দাবি ঘোষণা করেছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে সন্ধ্যায় বুয়েটসহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মোমবাতি জ্বালিয়ে সংহতি প্রকাশ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। 

আজ বুধবার বিক্ষোভ মিছিল শেষে এ দাবি জানানো হয়। শিক্ষার্থীরা বলেন, এ ধরণের ঘটনা প্রকাশের একটি কমন প্লাটফর্ম থাকতে হবে।নিয়মিত প্রকাশিত ঘটনার রিভিউ করে দ্রুততম সময়ে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। 

বুয়েট শিক্ষার্থীদের দশ দফা 

> আবরার ফাহাদের খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সিসিটিভি ফুটেজ ও জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুসারে শনাক্ত খুনিদের প্রত্যেকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

> সিসিটিভি ফুটেজ থেকে জড়িতদের শনাক্ত করে শুক্রবার বিকাল ৫টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করতে হবে।

> মামলার সব খরচ এবং আবরারের পরিবারের ক্ষতিপূরণ বুয়েট প্রশাসনকে বহন করতে হবে। শুক্রবার বিকাল ৫টার মধ্যে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক নোটিস জারি করতে হবে।

> দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে স্বল্পতম সময়ে আবরার হত্যা মামলার নিষ্পত্তি করার জন্য বুয়েট প্রশাসনকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বুয়েট প্রশাসনকে সক্রিয় থেকে সমস্ত প্রক্রিয়া নিয়ামত পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং নিয়মিত ছাত্রদের তথ্য দিতে হবে।

> আবরার হত্যা মামলার অভিযোগপত্রের কপি অবিলম্বে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করতে হবে।

> বুয়েটে ‘সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি’ নিষিদ্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে দীর্ঘদিন ধরে বুয়েটে হলে হলে ‘ত্রাসের রাজনীতি’ কায়েম করে রাখা হয়েছে। জুনিয়র ব্যাচকে সবসময় ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে রাজনৈতিক মিছিল মিটিংয়ে যুক্ত করা হয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে কোনো সময় যে কোনো হল থেকে সাধারণ ছাত্রদের হল থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে হলে হলে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। রাজনৈতিক সংগঠনের এহেন কর্মকাণ্ডে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ক্ষুব্ধ। তাই ১৫ই অক্টোবরের মধ্যে বুয়েটে সকল রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।

> বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কেন ৩০ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরও ঘটনাস্থলে যাননি এবং ৩৮ ঘণ্টা পরে উপস্থিত হয়ে কেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করেছেন, কোন তিনি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে স্থান ত্যাগ করেছেন, তাকে ক্যাম্পাসে এসে বুধবার দুপুর ২টার  মধ্যে জবাবদিহি করতে হবে।

> আবাসিক হলগুলোতে র‌্যাগের নামে এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর সকল প্রকার শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে এবং এ ধরনের সন্ত্রাসে জড়িত সকলের ছাত্রত্ব প্রশাসনকে বাতিল করতে হবে। একই সাথে আহসানউল্লাহ হল এবং সোহরাওয়ার্দী হলের পূর্বের ঘটনাগুলোতে জড়িত সকলের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে ১১ই অক্টোবর বিকাল ৫টার মধ্যে।

> আগে ঘটা এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ এবং পরবর্তীতে তথ্য প্রকাশের জন্য একটি কমন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে  কোনো ওয়েবসাইট বা ফর্ম থাকতে হবে এবং নিয়মিত প্রকাশিত ঘটনা রিভিউ করে দ্রুততম সময়ে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বুয়েটের বিআইআইএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে হবে। ১১ই অক্টোবর বিকাল ৫টার মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি প্রদর্শন করতে হবে এবং পরবর্তী ১ মাসের মধ্যে কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু করতে হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে সবগুলো হলের প্রত্যেক ফ্লোরের সবগুলা উইংয়ের দুই পাশে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করতে হবে।

> রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে আবাসিক হল থেকে ছাত্ৰ উৎখাতের ব্যাপারে নীরব থাকা এবং ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হওয়ায় শেরে বাংলা হলের প্রভাস্টকে ১১ই অক্টোবর বিকাল ৫টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে।

প্রসঙ্গত, আবরার ফাহাদ হত্যার পর পরই গ্রেপ্তার হন বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ১০ জন। বহিস্কার করা হয় ১১ জনকে। কমিটির সদস্যরা জানান, আবরারের বাবার দায়ের করা মামলায় ১৯ জনকে আসামী করা হলেও প্রাথমিক তদন্তে ১১ জনের বিরুদ্ধে সুষ্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে।

রবিবার রাত ২টার দিকে বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলের সিঁড়ি ঘর থেকে তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই হলের শিক্ষার্থীদের বরাত দিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় সন্ধ্যা ৭টার দিকে আবরারকে কয়েকজন ডেকে নিয়ে যায়। পরে, রাত ২টার দিকে হলের দ্বিতীয় তলার সিঁড়িতে তার মরদেহ পাওয়া যায়। মঙ্গলবার, সকাল ১০টায় কুমারখালীর রায়ডাঙ্গায় আবরারের গ্রামের বাড়িতে তৃতীয় ও শেষ জানাজা শেষ হবার পর পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।

 

আরও পড়ুন