জাতীয়, বিশেষ প্রতিবেদন, নারী

করোনায় বেড়েছে বাল্যবিয়ে: 'প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তাই দায়ী'

শামীম আহমেদ

ডিবিসি নিউজ

শনিবার ২৬শে জুন ২০২১ ০১:৩১:০২ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

করোনা মহামারি কিশোরীদের ঠেলে দিচ্ছে বাল্যবিয়ের দিকে। বেসরকারি সংস্থা 'মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন' বলছে, করোনাকালে প্রায় ১৪ হাজার কিশোরী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে ৫ হাজারেরও কম বিয়ে নিবন্ধিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিয়ে নিবন্ধকেরা। করোনাকালে শুধু প্রশাসন নয়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও বাল্যবিয়ে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকার এই কিশোরীর বয়স ১২ বছর। দরিদ্র বাবা-মা গত বছর তাকে জোর করে বিয়ে দেয় ৩০ বছর বয়সী এক যুবকের সাথে।

ওই কিশোরী বলেন, 'স্কুল তো জানুয়ারি থেকে বন্ধ। ফেব্রুয়ারি মাসে বিয়ে হলো। পড়ালেখা বাদ।'

ওই কিশোরীর মা বলেন, 'ওরাও নিলো, আমরাও দিলাম। পরে দেখলাম ছেলে ভালো না। আটদিন সংসার করে মেয়ে চলে আসছে।'

করোনায় দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকা, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব এবং বাল্যবিয়ে রোধে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় বাল্যবিয়ে বেড়েছে বলে জানান বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে কাজ করা এ তরুণী।

প্ল্যান বাংলাদেশ এর যুব প্রতিনিধি শাহিদা স্বর্ণা বলেন, 'বালবিয়ে হলে পুলিশ যাচ্ছে সেখানে। পুুলিশ গিয়ে বুঝিয়ে চলে আসছে। পরের দিনই শুনি যে বিয়েটা হয়ে গেছে। যদি সেখানে আইন বাস্তবায়ন হতো। একটা-দুইটা পরিবারে হলে অন্যরা ভয় পেতো।'

বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন বলছে, গত বছর করোনার সাত মাসে দেশের ২১ জেলার ৮৪ উপজেলায় ১৩ হাজার ৮৮৬টি বাল্যবিয়ে হয়েছে। এদের মধ্যে অত্যাশিতভাবে গর্ভধারণ করেছেন ৫,০৮৯ জন।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এর প্রকল্প সমন্বয়কারী অর্পিতা দাশ বলেন, 'দেশে সেক্সুয়াল হ্যারাজমেন্টের ঘটনা ঘটছে। রেপের ঘটনা ঘটছে। অনেক পরিবারই এসব কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেন।'

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এর প্রকল্প পরিচালক টনি মাইকেল জানান, 'যেখানে দেখে কাজী সাহেব হয়তো নিজেও বুঝতে পারছেন যে এই মেয়েটির বয়স ১৮'র কম। রাফ খাতায় বর-কনের নাম লিখে দেয়া হলো। কিন্তু মূল যে রেজিস্টার্ড খাতা সরকারি, সেই ডেটাবেজের খাতায় সেগুলো তোলা হয়নি।'

ইউনিসেফ বলছে, বাল্যবিয়ের হার বেশি এমন ১০টি দেশের মধ্যে অষ্টম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে বেশি ৫১ শতাংশ। বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে শীর্ষে ঢাকা বিভাগ ও জেলার মধ্যে শীর্ষে চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরামের নাসিমা আক্তার জলি বলেন, 'কোন কোন ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদ বলে আমরা নিরুপায়। তবে বেশিরভাগ কেইসে দেখা যায়, বিয়েটা হুজুর দিয়ে পড়িয়ে রাখে। সুতরাং রুরাল লেভেলে সচেতনতা রেইজ করা দরকার।'

জনপ্রতিনিধিরা জানান, বাল্যবিয়ে রোধে প্রশাসনের নজরদারি ও প্রচারণা বাড়ানো হয়েছে।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, 'শুধু প্রশাসন কেন বলবো, জনপ্রতিনিধি যারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার তাদেরও দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। কিন্তু বাস্তবতায় করোনায় নিজেরাই নিজেদের নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। ইউএনও, ডিসি সকলের কাছে আমাদের চিঠি যাচ্ছে। যে আপনারা এ বিষয়গুলোতে সচেতন হন।'

বেসরকারি সংস্থার জরিপ বলছে, বাল্যবিয়ের অন্যতম কারণ করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা।

আরও পড়ুন