আন্তর্জাতিক, বিবিধ, এশিয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

চীনের কৃত্রিম সূর্যের তাপ আসল সূর্যের পাঁচ গুণ বেশি

Faruque

ডিবিসি নিউজ

বুধবার ৫ই জানুয়ারী ২০২২ ০৩:১১:০২ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

গবেষণাগারে ‘কৃত্রিম সূর্য’ তৈরি করেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। সাম্প্রতিক পরীক্ষণে কৃত্রিম সূর্য ৭ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপ উৎপন্ন করে, যা আসল সূর্যের পাঁচ গুণের কাছাকাছি। তার চেয়েও বড় কথা, এই তাপ প্রায় ১৮ মিনিট পর্যন্ত ধরে রাখতে সফল হয়েছেন তাঁরা।

বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এতে নিউক্লিয়ার ফিউশন বা কেন্দ্রকীয় সংযোজন প্রক্রিয়া কাজে লাগিয়ে পরিবেশবান্ধব বিপুল শক্তি উৎপন্ন করা সম্ভব হবে। অন্তত সে পথে এক ধাপ এগিয়ে নেবে।

নিউক্লীয় বিক্রিয়ায় একাধিক হালকা নিউক্লিয়াই সংযোজিত হয়ে তুলনামূলক ভারী নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। পাশাপাশি এ প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয় বিপুল শক্তি। মূলত সূর্যের নিউক্লিয়ার ফিউশনের প্রক্রিয়া অনুকরণ করছেন ওই বিজ্ঞানীরা।

শিনহুয়া নিউজ এজেন্সি জানায় , চীনের আনহুই প্রদেশের হফেই শহরের ‘এক্সপেরিমেন্টাল অ্যাডভান্সড সুপারকন্ডাক্টিং টকামাক (ইএএসটি)’ নামের নিউক্লীয় ফিউশন চুল্লিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যস্ত গবেষকেরা। হফেই ইনস্টিটিউট অব ফিজিক্যাল সায়েন্সের অংশ এটি। এখন চুল্লিটিকে আরও শক্তপোক্ত, আরও তাপসহনীয় করার চেষ্টা করছেন তাঁরা।

এ ধরনের গবেষণাগারকে কৃত্রিম সূর্য বলার কারণ সেখানে মূল সূর্যের নিউক্লীয় ফিউশনের প্রক্রিয়া অনুকরণ করা হয়। অর্থাৎ সূর্যের শক্তি উৎপন্নের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে। এমন বিক্রিয়ায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় হাইড্রোজেন ও ডিউটেরিয়াম গ্যাস।

এর মূল লক্ষ্য বলা যায় মানুষের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদার পরিবেশবান্ধব উৎস তৈরি। সমুদ্রের এক লিটার পানি থেকে যে পরিমাণ ডিউটেরিয়াম গ্যাস পাওয়া যাবে, তা থেকে নিউক্লিয়ার ফিউশনের মাধ্যমে পাওয়া শক্তি ৩০০ লিটার গ্যাসোলিন পুড়িয়ে পাওয়া শক্তির প্রায় সমান।

এবার ভেবে দেখুন, সমুদ্রে কত পানি আছে আর তা থেকে কী পরিমাণ ডিউটেরিয়াম আহরণ সম্ভব। এখন নিউক্লিয়ার ফিউশনের মাধ্যমে কাজে লাগানোর মতো শক্তি উৎপন্নের টেকসই পদ্ধতি উদ্ভাবন সম্ভব হলেই লাখ লাখ বছরের জ্বালানি চাহিদা নিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া যেত।

ইএএসটি গবেষণাগারটি চীনাদের তৈরি হলেও ২০০৬ সাল থেকে বিশ্বের নানা দেশের বিজ্ঞানীরা সেখানে গবেষণা করেন। ১০ হাজারের বেশি চীনা এবং বিদেশি বিজ্ঞানীর কাজের ফল এই কৃত্রিম সূর্য। এ প্রকল্পে চীন এরই মধ্যে ৭০ কোটি ১০ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড খরচ করেছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড দ্য সান। গত ডিসেম্বরের শুরুতে শুরু হওয়া পরীক্ষণটি চলবে আগামী জুন পর্যন্ত।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গবেষকেরা ‘কৃত্রিম সূর্য’ ৭ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপে ১৭ মিনিট ৩৬ সেকেন্ড পর্যন্ত পরিচালনা করেন। অথচ মূল সূর্যের কেন্দ্র দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো উত্তপ্ত হতে পারে।

চায়নিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের ইনস্টিটিউট অব প্লাজমা ফিজিকসের পরিচালক সং ইয়ুনতাওয়ের ভাষায়, গবেষণা থেকে প্রায়োগিক পর্যায়ের পথে এগিয়ে যাওয়ার মাইলফলক এটি।

গত মে মাসে ইএএসটি আরেকটি মাইলফলক অর্জন করে। সেবার ১২ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াসে চুল্লিটি ১০১ সেকেন্ড ধরে চলেছিল।

আরও পড়ুন