বিনোদন, তারুণ্য, অন্যান্য

তরুণ প্রজন্মের কাছে কেন এত জনপ্রিয় বিটিএস?

সুজানা ইসলাম শ্বেতা

ডিবিসি নিউজ

শনিবার ১৫ই জানুয়ারী ২০২২ ০৫:০৭:৩১ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

বর্তমান দুনিয়ায় সাড়া জাগানো কে-পপ ব্যান্ড বিটিএস।

“হটার, সুইটার, কুলার, বাটার- গেট ইট লেট ইট রোল’’, আপনি সম্ভবত এই গানটি কোথাও বাজতে, বা কাউকে গুনগুনিয়ে গাইতে শুনেছেন। তবু কোনও কারণে গানটির সাথে আপনার যদি পরিচয় না থাকে তবে জেনে রাখুন বিটিএসের এই “বাটার’’ গানটি মোট ১০ সপ্তাহের জন্য বিলবোর্ড সেরা ১০০ গানের তালিকায় ১ নম্বরে ছিল। এখন হয়তো ভাবছেন, বিটিএস কে? তারা কোথা থেকে এসেছেন এবং কেন তরুণ প্রজন্ম তাদের এত ভালোবাসে?

বাংতান সোনিয়োন্দান বা বিটিএস বর্তমান সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় কোরিয়ান বয় ব্যান্ড। হালে তারা জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকলেও তাদের যাত্রাটা অতটা সুখকর ছিল না।

২০১৩ সালে প্রায় দেউলিয়া হয়ে যাওয়া বিনোদন কোম্পানি বিগ হিট এন্টারটেইনমেন্টের অধীনে আত্মপ্রকাশ করে দলটি। বিগ হিটের তহবিলের পরিমাণও ছিল অত্যন্ত কম। সাতজন তরুণ কে-পপ শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন অনুসরণ করে ব্যান্ড দল হিসেবে গড়ে তুলেছিল ঠিকই, তবে রাতারাতি সফলতা ধরা দেয়নি। 
বরং মিডিয়ার নেতিবাচক সংবাদ, অভ্যন্তরীণ কলহ এবং পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে দলটি একাধিকবার ভেঙে দিতে বাধ্য হয়েছিল তারা, সেই সাথে বারবার ভেঙ্গে গিয়েছিল তাদের স্বপ্ন। কিন্তু যে দলের একদিন সংগীত দুনিয়া শাসন করার কথা, তাদের তো থেমে গেলে চলে না।
তারা তাদের স্বপ্নের জন্য জোর কদম লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল। এ সময়টায় এমনকি এক রুমে গাদাগাদি করে ৭ জনকে বসবাস করতে হয়েছে। কনসার্টে আসার জন্য নিজেরাই নিজেদের লিফলেট বিতরণ করেছে। 
কয়েক বছর পরে, দক্ষিণ কোরিয়ার ছেলেদের সেই একই দল, “বিটিএস’’ এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যান্ডগুলির মধ্যে একটি৷ অসামান্য সব কৃতিত্বের মধ্যে রয়েছে ইউএস বিলবোর্ড হট ১০০, ১৫ টি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এবং ৩০০ টিরও বেশি পুরস্কারে এক নম্বর অ্যালবাম হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া। বিটিএস হল দক্ষিণ কোরিয়ার অর্ডার অফ কালচারাল মেরিট পুরস্কারের সর্বকনিষ্ঠ প্রাপক এবং গ্র্যামি মনোনয়ন প্রাপ্ত প্রথম কে পপ আ্যার্টিস্ট। তারা বিশ্বে কে-পপের চেহারা চিরতরে বদলে দিয়েছে, নতুনদের জন্য পথ তৈরি করছে। এমনকি তাদের যুব ক্ষমতায়ন এবং শিক্ষা সম্পর্কে জাতিসংঘে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণও জানানো হয়। ২০১৮ সালে এই জনপ্রিয় ব্যান্ডটি জাতিসংঘে তাদের প্রথম বক্তৃতা দেয়। পরে আবারও ২০২১ সালেও এই দলটি জাতিসংঘে বক্তৃতা করার সম্মান লাভ করে। 
সাতজন সদস্যের প্রত্যেকেই দলে ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা রাখে, যেমন নৃত্যশিল্পী, কণ্ঠশিল্পী, দলননেতা, র‌্যাপার, প্রযোজক, কোরিওগ্রাফার এবং আরও অনেক কিছু। ভক্তদের মতে, বিটিএস এর গানগুলি ভাষা, সময় এবং সাংস্কৃতিক গন্ডিতে আবদ্ধ নয়। তাদের বেশিরভাগ স্ব-লিখিত গানগুলি সমসাময়িক সমাজে পাওয়া সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করে; যেমন মানসিক স্বাস্থ্য, বিষাক্ত-পুরুষত্ব, নারীর ক্ষমতায়ন, আত্মপ্রেম, পুঁজিবাদ, জ্বলে ওঠা এবং বেড়ে ওঠার সংগ্রাম। 
বিটিএস এর ভক্তরা সাধারণত নিজেদেরে “আর্মি’’ নামে পরিচয় দেয়। এরা মূলত একদল আবেগী কিশোর-কিশোরী এবং জীবনের সকল স্তরে বিটিএসের পাশে দাঁড়াতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ভক্তরা দৈনন্দিন জীবনের নানা পরিস্থিতিতে বিটিএসের গানের কথায় অনুপ্রেরণা খুঁজে পায়। বেদনা কিংবা উদযাপন, প্রতিটি আবেগের জন্য বিটিএসের  অন্তত একটি গান আছে। মানুষের কাছ থেকে বহু ঘৃণা পাওয়া স্বত্ত্বেও বিটিএস খোলাখুলিভাবে তাদের জীবন সংগ্রামের কথা বলে এবং লিঙ্গ ধারণায় সীমাবদ্ধতার কথা অস্বীকার করে। আর এভাবেই খুব সহজেই তারা তাদের শ্রোতাদের জীবনে মিশে যেতে পারে। 
কারও কাছে বিটিএস মেয়েলি, আবার কারও কাছে সিলেবাসের বাইরের বিষয়। তবে সব আলোচনা সমালোচনাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে বিটিএস ঠিকই উড়ছে তাদের গানের খ্যাতির মতো করে।

আরও পড়ুন