জেলার সংবাদ, অপরাধ, কৃষি

নামি-দামি কোম্পানির মোড়কে ভেজাল সার, আর্থিক ক্ষতির মুখে কৃষক

যশোর প্রতিনিধি

ডিবিসি নিউজ

রবিবার ১৩ই সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৯:৪৯:১৩ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

ছাই, পচা শেওলা, পাথরের কুচি, ডিনামাইট পাউডার, পোড়া মাটি, জিপসাম, হাওর অঞ্চলের শামুকের কুচি, পাথর কুচির সাথে রং মিশিয়ে ভেজাল দস্তা সার উৎপাদন ও বিক্রি।

চলতি আমন মৌসুমে যশোরাঞ্চলে ভেজাল সার তৈরি ও বিপণন মারাত্মক হারে বেড়ে গেছে। আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা ও কৃষি বিভাগে দায়িত্ব নিয়োজিত কর্মকর্তাদের আর্থিক সুবিধা দিয়ে ভেজাল সার তৈরি ও বিপণন চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ চক্রের সদস্যরা দেশি-বিদেশি নামি-দামি কোম্পানির মোড়কে ভেজাল সার ভরে বড় বড় সারের মোকামে বিক্রি করে থাকে। আর ওই সার কৃষকেরা ক্ষেতে ব্যবহার করে ভালো ফসল না পেয়ে সর্বস্ব খুইয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আর এতে বড় ভূমিকা রাখছে এ জেলার সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা ডজনখানেক ভেজাল সার কারখানার মালিকরা।

মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট করে এমন সব উপাদান মিশিয়ে কারখানাগুলোতে উৎপাদিত হচ্ছে ভেজাল দস্তা, জিংক, টিএসপি ও এমপি সার। ফলে হুমকিতে পড়ছে শস্য উৎপাদন ব্যবস্থা।

এদিকে, ভেজালবিরোধী অভিযান চালিয়ে গত পাঁচ বছরে ওই সব কারখানার কয়েকটি সিলগালা করা এবং কোনোটির নিবন্ধন নবায়নের অনুমতি দেয়া না হলেও থেমে থাকেনি ভেজাল সার উৎপাদনের কার্যক্রম।

ভেজাল দস্তা সার কারখানার মালিকেরা ছাই, পচা শেওলা, পাথরের কুচি, ডিনামাইট পাউডার, পোড়া মাটি, জিপসাম, হাওর অঞ্চলের শামুকের কুচি, পাথর কুচির সাথে রং মিশিয়ে সার উৎপাদন করেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। পরে, ওই সার শিল্পনগর নওয়াপাড়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলের সারের বড় মোকামে বাজারজাত করে সর্বোচ্চ মুল্যে কৃষকদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে।

অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, এসব ভেজাল সারে রং মেশানো হয়। তারপর ভারত, চায়না, কোরিয়া থেকে আমদানি করা উন্নতমানের সার বলে কৃষকের কাছে বিক্রি করা হয়।

অভিযোগ উঠেছে, সার ব্যবস্থাপনা আইন-২০০৬ অনুযায়ী যিনি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, তিনিই সার উৎপাদন কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। নির্বাহী হাকিম ও পুলিশের সহায়তা নিয়ে ভেজালবিরোধী অভিযান চালানোর দায়িত্ব তারই ওপর ন্যস্ত। তবে, অজ্ঞাত কারণে, গত কয়েক বছরে উপজেলার সার কারখানাগুলোতে তেমন অভিযানও চালানো হয়নি।

ভেজাল ও মানহীন সার ব্যবহার কারণে উৎপাদন শূন্যের কোটায় নেমেছে। তাই অবিলম্বে ভেজাল ও মানহীন সার উৎপাদন বন্ধ এবং উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কৃষিমন্ত্রী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভেজাল সার উৎপাদনকারী জানান, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই আমরা এ ব্যবসা করে থাকি।

এ ব্যাপারে যশোর সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সাজ্জাদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি যশোরে যোগদান করেছি ১৫ দিন হলো। সদর উপজেলার সব জায়গাও চিনিনা। আমার কাছে ভেজাল সার কারবারিদের কোনো তথ্য নেই। তবে, সকলে সহযোগিতা করলে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অসাধু ও ভেজাল সার কারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ভেজাল সার কারবারিদের বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযান শুরু করারও আশ্বাস দেন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন