মতামত, নারী

নারীর ক্ষমতায়নের জন্য প্রযুক্তি কতটুকু অবদান রাখছে?

গ্যারেট, প্রোডাক্ট ডিরেক্টর, ইমো

ডিবিসি নিউজ

মঙ্গলবার ৮ই মার্চ ২০২২ ০৩:৪৬:০৬ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

বিভিন্ন খাতে প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও, নারীর ক্ষমতায়নের জন্য প্রযুক্তি সত্যিকার অর্থে কতটুকু অবদান রাখছে?

প্রতিনিয়তই বদলে যাচ্ছে আমাদের পৃথিবী। পরিবর্তনশীল এ পৃথিবীতে প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে। প্রযুক্তি আমাদের সামনে অবারিত সুযোগ তৈরি করেছে। প্রযুক্তির আশীর্বাদ আমাদের জীবন ও অর্থনীতির ওপর ফেলছে ইতিবাচক প্রভাব। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন খাতে প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য প্রযুক্তি সত্যিকার অর্থে কতটুকু অবদান রাখছে?

নিজের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিকেই আমরা ক্ষমতায়ন বলতে পারি। ক্ষমতায়নের বিষয়টি একজন ব্যক্তির পছন্দের স্বাধীনতা থেকেই আসে। তবে, পিতৃতান্ত্রিক সমাজের আধিপত্যের কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতায়ন বাধাগ্রস্ত হয়, যা দেশের অর্থনীতির উন্নয়নকে প্রভাবিত করে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪৯.৪২ শতাংশই নারী, এ কারণে দেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরাণ্বিত করতে তাদের অংশগ্রহণ অতীব জরুরি। এ প্রবৃদ্ধি অর্জনে অর্থাৎ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নারীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ও বিভিন্ন এনজিও যূথবদ্ধভাবে কাজ করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, এবং এই স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে অংশ নিচ্ছে নারীরাও । নারীর ক্ষমতায়নে গ্রহণ করা বিভিন্ন উদ্যোগের স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) কর্তৃক প্রকাশিত বৈশ্বিক লৈঙ্গিক ব্যবধান সূচক ২০২১ এ বাংলাদেশ ১৫৬টি দেশের মধ্যে ৬৫তম৩ অবস্থান অর্জন করেছে। ফলে, বাংলাদেশ টানা সাত বছর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তাদের সেরা অবস্থান ধরে রেখেছে।

বৈশ্বিক ডিজিটালাইজেশন বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি সমতা-ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের যাত্রায় এ ধরণের পদক্ষেপগুলো নিয়ামক ভূমিকা রাখছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইন্সট্যান্ট মেসেজিং (আইএম) অ্যাপ এর মতো বহুমূখী প্রযুক্তি নারীদের সামনে অবারিত সুযোগ ও পছন্দের স্বাধীনতা নিয়ে এসেছে। ডিজিটালাইজেশন অনলাইন-ভিত্তিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তৈরিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে, আর এ বিষয়টিই নারী স্বাধীনতার পথকে সুগম করেছে। বাংলাদেশের সমাজে নারীদের ক্ষমতায়ন ত্বরাণ্বিত করতে প্রযুক্তি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। 

বাংলাদেশের সমাজে লৈঙ্গিক-বিষয়ক যে প্রচলিত ধারণা রয়েছে তা নারীদের পরিবার ও সন্তান-সন্ততি লালনপালনের দায়িত্বের সাথে যুক্ত করেছে, আর এ বিষয়টিই তাদের স্বপ্ন পূরণের বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অনেক সময় অতিরিক্ত দায়িত্বের ভারে নারীদের জীবন কঠিন হয়ে পড়ে, যা একইসঙ্গে তাদের পরিবার ও সমাজের চাপে চার দেয়াল ভেঙ্গে বাইরে বের হওয়ার পথকে রুদ্ধ করে।

এমন পরিস্থিতিতে, নারীদের জীবনে অর্থনৈতিক মুক্তির সুযোগ করে দিয়েছে প্রযুক্তি, কারণ প্রযুক্তির কল্যাণে এখন নারীরা বাসা থেকেই নিজেদের পেশা জীবন শুরু করতে পেরেছে। ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশের কারণেই নারীরা উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ লাভ করেছে; এবং এর মাধ্যমে নারীদের পরিচালিত বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি৪ সাধিত হয়েছে। ইন্টারনেটের কল্যাণে নারীরা আজকে যে কোন স্থান থেকে শিখতে ও উপার্জন করতে পারছে। প্রযুক্তির কল্যাণে বিভিন্ন ধরণের পেমেন্ট পরিশোধের মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে  অর্থনৈতিক লেনদেনের পথ আরো সহজ হয়েছে; একইসঙ্গে সামাজিক মাধ্যম ও ইন্সট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্মগুলো নারীদের নেটওয়ার্কিংয়ের (নতুন মানুষের সাথে পরিচিতি লাভ) বিষয়টিকেও ত্বরাণ্বিত করেছে। প্রযুক্তি খাতে নারীর অংশগ্রহণই ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের যাত্রায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

নেতৃত্ব প্রদানের ভূমিকার ক্ষেত্রে ‘সফট স্কিলস’ এর পাশাপাশি 'হার্ড স্কিলস' (চর্চার মাধ্যমে রপ্ত দক্ষতা) ও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যোগাযোগ, সমানুভূতি ও কোন একটি বিষয় পূর্ণ মনোযোগের সাথে অবলোকনের বৈশিষ্ট্য একজন নেতার সহজাতভাবেই থাকা উচিত। কর্ন ফেরি এর গবেষণায়৫ উঠে এসেছে ১২টি ’কি ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স’ এর ১২টির মধ্যে ১১ টিতেই নারীরা পুরুষদের ছাপিয়ে গেছে। প্রযুক্তি নারীদের এ সহজাত দক্ষতাগুলো বিকাশে ও এগুলোর উৎকর্ষ সাধনের সুযোগ করে দিয়েছে। ক্লায়েন্ট ও ভেন্ডরের সাথে প্রতিনিয়ত সহজ যোগাযোগের জন্য একজন উদ্যোক্তার ইমো’র মতো ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে, বৈশ্বিক মহামারির সময় এ মেসেজিং অ্যাপগুলোর ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এ অ্যাপগুলো শুধুমাত্র ফলপ্রসূ ব্যবসায়িক যোগাযোগের ক্ষেত্রেই কার্যকর ভূমিকা রাখে না, পাশাপাশি এ অ্যাপগুলো যে কোনো জায়গায় অবস্থানকারী বন্ধু, পরিবারদের সাথে যোগাযোগ রক্ষার্থেও সহায়ক ভূমিকা রাখে। নারীদের জন্য এটি নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ তৈরি করে এবং বিভিন্ন মানুষের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের ‘সফট স্কিলস’ এ পারদর্শী হতেও সাহায্য করে।

ভিডিও এবং অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে অনেক নারী, পেশাদার ও দক্ষ ব্যক্তিদের কাছ থেকে নতুন নতুন বিষয় জানতে ও শিখতে পারে। এর মাধ্যমেই তারা আরো আত্মবিশ্বাসী, প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাবের অধিকারী ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা লাভ করতে পারবে।

নিজের বিকাশ, ক্যারিয়ার ও অন্যের সাথে সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে নারীদের সামাজিকভাবে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জনের জন্য সত্যিকার অর্থে প্রযুক্তির অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে। এ প্রাযুক্তিক বিপ্লবের সহায়তায়, লৈঙ্গিক সমতা অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুরোপুরি নারীর ক্ষমতায়ন ভিত্তিক সমাজ তৈরি করতে পারবে!

আরও পড়ুন