ফিতরা বা ফেতরা(فطرة) আরবী শব্দ, যা ইসলামে যাকাতুল ফিতর (ফিতরের যাকাত) বা সাদাকাতুল ফিতর (ফিতরের সদকা) নামে পরিচিত।
ফিতর বা ফাতুর বলতে সকালের খাদ্যদ্রব্য বোঝানো হয় যা দ্বারা রোজাদারগণ রোজা ভঙ্গ করেন। যাকাতুল ফিতর বলা হয় ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গরীব দুঃস্থদের মাঝে রোজাদারদের বিতরণ করা দানকে।
রোজা বা উপবাস পালনের পর সন্ধ্যায় ইফতার বা সকালের খাদ্য গ্রহণ করা হয়। সেজন্য রমজান মাস শেষে এই দানকে জাকাতুল ফিতর বা সকালের আহারের জাকাত বলা হয়। (ফাতহুল বারী ৩, পৃষ্ঠা ৪৬৩)
নারী-পুরুষ, স্বাধীন-পরাধীন, শিশু-বৃদ্ধ, ছোট-বড় সব মুসলিমের জন্য ফিতরা প্রদান করা ওয়াজিব।
ইবনে ওমর (রা.) থেকে জানা যায়, ‘রাসূল (সা.) প্রত্যেক স্বাধীন-ক্রতদাস, নারী-পুরুষ, ছোট-বড় মুসলমানের জাকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন এক ‘সা’ পরিমাণ খেজুর বা যব। তিনি লোকদের ঈদের নামাজে বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায় করার আদেশ দিয়েছেন। (সহিহ বুখারী, সহিহ মুসলিম)।
ঈদের দিন সকালবেলায় যিনি নিসাব পরিমাণ সম্পদের (সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বাহান্ন ভরি রুপা বা সমমূল্যের ব্যবসাপণ্যের) মালিক থাকবেন, তার নিজের ও পরিবারের ছোট–বড় সবার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা তার প্রতি ওয়াজিব।
যারা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নন, তাদের জন্যও ফিতরা আদায় করা সুন্নত ও নফল ইবাদত। একে অন্যের ফিতরা আদায় করতে পারবেন। সুবিধার জন্য রমজানেও ফিতরা আদায় করা যায়।
যাদের জাকাত দেয়া যায়, তাদের ফিতরাও দেয়া যায়। ফিতরা নির্ধারিত খাদ্যসামগ্রী বা তার মূল্যে টাকায়ও আদায় করা যায় এবং অন্য কোনো বস্তু কিনেও দেয়া যায়। পিতা, মাতা ও ঊর্ধ্বতন এবং ছেলে, মেয়ে ও অধঃস্তন এবং যার ভরণপোষণের দায়িত্ব রয়েছে (যেমন স্ত্রী), তাদের ওয়াজিব ফিতরা ও জাকাত প্রদান করা যায় না।
হজরত ইমাম আযম (রহ.) এর মতে, অধিক মূল্যের দ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায় করা উত্তম; অর্থাৎ যা দ্বারা আদায় করলে গরিবদের বেশি উপকার হয়, সেটাই উত্তম ফিতরা। ইমাম মালিক (রহ.) এর মতে, খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করা উত্তম এবং খেজুরের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত ‘আজওয়া’ খেজুর দ্বারাই আদায় করা উত্তম। ইমাম শাফিয়ী (রহ.) এর মতে, হাদিসে উল্লিখিত বস্তুসমূহের মধ্যে সর্বোত্কৃষ্ট ও সর্বোচ্চ মূল্যের দ্রব্য দ্বারা সদকা আদায় করা শ্রেয়। অন্য সব ইমামের মতও অনুরূপ।
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) এর মতে, সাহাবায়ে কিরাম (রা.) এর অনুসরণ হিসেবে খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করা উত্তম। এ ছাড়া সদকার ক্ষেত্রে সব ফকিহর ঐকমত্য হলো, ‘যা গরিবদের জন্য বেশি উপকারী।’ (আল মুগনি, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ২১৯; আওজাজুল মাসালিক শরহে মুআত্তা মালিক, খণ্ড: ৬, পৃষ্ঠা: ১২৮)।
মুজতাহিদ ফকিহদের মতে, যেখানে যা প্রধান খাদ্য তা দ্বারা আদায় করা শ্রেয়।
মুজতাহিদ ইমামদের মতে, যেসব খাদ্যবস্তু,
(ক) সহজে সংরক্ষণযোগ্য,
(খ) সহজে বিনিময়যোগ্য ও
(গ) বাজারমূল্য স্থিতিশীল থাকে;
সেসব খাদ্যদ্রব্য দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করা যায়। উল্লেখ্য, চালের মধ্যে এই তিনটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান এবং সৌদি আরবসহ সব আরব দেশ এবং প্রায় সব মুসলিম দেশ বর্তমানে চালের হিসাব গ্রহণ করেছে।
বিভিন্ন দামের খাদ্যবস্তু রয়েছে, এর মধ্যে কোনটি দ্বারা ফিতরা আদায় করা হবে? উত্তম হলো সর্বোচ্চ মূল্যের খেজুর বা চালের মূল্যে আদায় করা। তবে ধনীরা সর্বোচ্চ এবং সাধারণরা মাঝামাঝি মূল্যে আদায় করাই শ্রেয়।
ইনসাফ হলো, যারা যে চালের ভাত খান বা যারা যে খেজুর দ্বারা ইফতার করেন, তারা সে সমমানের বা সমমূল্যে ফিতরা আদায় করবেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তা-ই উত্তম, দাতার নিকট যা সর্বোৎকৃষ্ট এবং যার মূল্যমান সবচেয়ে বেশি।’ (বুখারী, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ১৮৮)।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, রমজনের রোজায় ফিতরা আদায় করে গরিবের দুঃখ-কষ্ট দূর করতে ভূমিকা রাখা। তাদের মুখে হাসি ফোটানো। তাদের আনন্দ ও উৎসবে অংশগ্রহণে সহযোগিতা করা।