লাইফস্টাইল, নারী

হাজার বছরের ঐতিহ্য শাড়ির সঙ্গে টপস ও জিন্সের নতুন ট্রেন্ড

ফারুক

ডিবিসি নিউজ

বৃহঃস্পতিবার ৭ই অক্টোবর ২০২১ ০২:১৪:০৬ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

দেশীয় শাড়ির সাথে পশ্চিমা পোশাকের সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয়েছে নতুন এক ফ্যাশন ট্রেন্ড। ফ্যাশন সচেতন তরুণীরা এখন জিন্স, টপস বা টি-শার্টের সাথেও শাড়ি পরছেন।

আধুনিক ফ্যাশন জগতে জায়গা করে নিচ্ছে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মেয়েদের পছন্দের পোশাক ‘শাড়ি’। ঐতিহ্যবাহী পোশাক শাড়ি এই অঞ্চলের নারীদের সৌন্দর্যের প্রতীক। সম্প্রতি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে শাড়ি নিয়ে দেখা দিয়েছে নতুন উদ্দীপনা।

শাড়ি শব্দটি সংস্কৃত সাতি থেকে এসেছে। যার অর্থ এক ফালি কাপড়। এটা সাধারণত চার থেকে ৯ গজ পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কিন্তু, বেশিরভাগ শাড়ি ছয় গজের মধ্যেই হয়ে থাকে। শাড়ি পরার প্রচলন শুরু হয় ৩২০০ থেকে ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ সিন্ধু সভ্যতা থেকে। তখনকার মানুষ একটি লম্বা কাপড় পরিধান করতো। সেই লম্বা বসনই কালের পরিক্রমায় শাড়িতে রুপ নিয়েছে। এ পোশাকটির বেশি পরিবর্তন ঘটেছে ১৯ শতকে ব্রিটিশ শাসনামলে।

মুকুলিকা ব্যানার্জী ও ডেনিয়েল মিলার ‘দ্য শাড়ি’ নামক গ্রন্থে শাড়ি পড়ার বিভিন্ন ধরন উল্লেখ করেছেন। তারা ‘নিভি’ নামক শাড়ি পরিধান বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। বর্তমানে এই পদ্ধতিতেই বেশি শাড়ি পরিধান করা হয়।

আগে মেয়েরা ঘরে ব্লাউজ ছাড়া শাড়ি পরিধান করতেন। তবে, ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতীয় সমাজ সংস্কারক জননন্দিনি দেবি ব্লাউজ ও পেটিকোট পরার প্রচলন শুরু করেন। তিনি মুম্বাইতে তার পারস্যের বন্ধুর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তখন থেকে ‘নিভি’ পদ্ধতির শাড়ি পরার প্রচলন শুরু হয়। এই পদ্ধতিতে একটি অংশ কোমর থেকে পেঁচিয়ে অপর অংশটি কাঁধে ছড়িয়ে দেয়া হয়। বিংশ শতাব্দীর শুরু দিকে এই পদ্ধতিতে শাড়ি পরিধান নারী জাগরণের প্রতিকৃত হয়ে ওঠে।

প্রাচীন বস্ত্র শিল্প নিয়ে লেখা একটি ধারাবাহিক গ্রন্থে লেখক আরতি কাউলরা একটি প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, এই বিপ্লবে শাড়ি ভারতীয় নারীর প্রতীক হয়ে ওঠে। যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংস্কৃতি এবং নারীত্বকে ফুটিয়ে তোলে। তিনি বলেন, বিংশ শতাব্দীর জাতীয়তাবাদ এবং লৈঙ্গিক সামাজিক রীতিনীতিতে শাড়ি ভারতীয় নারীর প্রতিনিধিত্ব করতে শুরু করে। তখন থেকে দক্ষিণ এশিয়ার আধুনিক নারী সমাজের পোশাক হয়ে ওঠে শাড়ি। নারীর শালীনতা, রুচিবোধ, এবং সম্মানের জায়গা করে নেয়।

মুকুলিকা ব্যানার্জী বলেন, শাড়ি এবং নারীর সৌন্দর্যের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের সমাজের মেয়েরা বিয়ের পর শাড়ি পরা শুরু করে। এই পোশাকটি একটি মেয়েকে নারী হয়ে ওঠার একটা প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেমন-ছেলেদের স্যুট পরা পুরুষ হয়ে ওঠার প্রতীক।

বহু বিবাহিত নারীর জন্য শাড়ি একটি অত্যাবশ্যকীয় পোশাক। তবে, ব্যবহার ভেদে এর ধরনেও রয়েছে বৈচিত্র্য। যেমন ঘরে নিত্য ব্যবহারের জন্য একধরনের শাড়ি, বাজার বা উপাসনালয়ে একধরনের শাড়ি, আবার কোনও উৎসব বা বিবাহ অনুষ্ঠানে ভিন্ন ধরনের শাড়ির প্রচলন রয়েছে।

ব্যানার্জী জানান, শাড়ি সমাজ বিপ্লবে একটি মূল উপপাদ্য হয়ে ওঠে। লাখ লাখ শ্রমজীবী নারী যারা নির্মাণ শ্রমিক বা কৃষি ক্ষেত্রে কাজ করেন, তাদের জন্য শাড়ি একটি সুলভ পোশাক হিসেবে বিবেচিত হয়।

সাম্প্রতিক ফ্যাশন জগতে লেগেছে পরিবর্তনের হাওয়া। ফ্যাশন ডিজাইনাররা শাড়িকে প্রচলিত নারীর বসন থেকে আধুনিক পোশাকে পরিবর্তন করছেন। নতুনত্বের ছোঁয়া লাগছে দক্ষিণ এশিয়ার পোশাকের ধারায়। পশ্চিমা পোশাকের সাথে দেশীয় শাড়ির সংমিশ্রণে যুক্ত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন এক ফ্যাশন ট্রেন্ড। মেয়েরা এখন জিন্সের সাথে শাড়ি পড়ছে অথবা ব্লাউজের বদলে টপস বা টি-শার্টের সাথে শাড়ি। এমনকি শাড়ির সাথে জুতা বা স্নিকার্স পরার প্রচলন শুরু হয়েছে।

পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও। ফ্যাশন জগতে নতুনত্ব আনার এই প্রয়াসে এগিয়ে আসছে মার্কিন পোশাক ব্রান্ড জেন-জি। পশ্চিমা পোশাকের সাথে দেশীয় শাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে সমান তালে। বিশ্বব্যাপী বাড়ছে এর জনপ্রিয়তা। তরুণ প্রজন্মের কাছে শাড়ি হয়ে উঠছে হাল ফ্যাশনের নতুন অনুষঙ্গ।

আরও পড়ুন