রাজনীতি

'বিএনপির সমালোচনা ছেড়ে করোনা মোকাবিলা করুন'

শামীম আহমেদ

ডিবিসি নিউজ

শুক্রবার ৯ই এপ্রিল ২০২১ ০৬:৩৩:৪২ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

অযথা বিএনপির সমালোচনায় সময় নষ্ট না করে সরকারকে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নইলে করোনার কারণে জনগণের জীবন ও জীবিকা বিপন্ন হওয়ার দায় সরকারকেই নিতে হবে বলে জানান তিনি।

শুক্রবার (৯ এপ্রিল) বিকেলে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে অনলাইনে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। এসময় তিনি বলেন, সরকারের উদাসীনতা, অগ্রাধিকার নির্ধারণে ইচ্ছাকৃত উপেক্ষা, রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের অপকৌশল হিসেবে করোনা সংক্রমণের তথ্য গোপন ও সীমাহীন ব্যর্থতা আজ পুরো দেশকে এক বিপদ সঙ্কুল পথে নিয়ে চলেছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে করোনা শনাক্ত এবং মহামারী আকারে সংক্রমণের পর সারা বিশ্বের জনবান্ধব রাষ্ট্রগুলো যখন সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে শুরু করে- বাংলাদেশের সরকার তখন স্বভাবসুলভ বলতে শুরু করে, “আমরা করোনার চেয়ে শক্তিশালী”। “যে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সে দেশে করোনা কিছুই করতে পারবে না।” এসব উন্মাদীয় বক্তব্য দিয়ে তারা জনগণের সাথে প্রতারণা শুরু করে এবং করোনা প্রতিরোধে সামান্যতম উদ্যোগ গ্রহণ না করে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে বিভোর থাকে।

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, সারা পৃথিবীতে যখন বিমান চলাচল সীমিত এবং যাত্রী প্রবেশে কঠোর কড়াকড়ি আরোপ করলো, বাংলাদেশ তখনও এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন ও নির্বিকার থাকলো। করোনাক্রান্ত দেশ চীন, ইতালি, স্পেন মধ্যপাচ্য থেকে প্রচুর প্রবাসী কর্মহীন হয়ে পড়ায় কিংবা নাড়ীর টানে দেশে ফিরে আসে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে হৈচৈ শুরু হলে তারা বললো, করোনা প্রতিরোধে বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত থার্মাল স্ক্যানার বসানো হয়েছে। অথচ দেখা গেলো ১টি ছাড়া সবগুলো থার্মাল স্ক্যানারই নষ্ট। অনেকটা যথাযথ করোনা পরীক্ষা ছাড়াই বিদেশ থেকে বিশেষ করে করোনা সংক্রমণ দেশ থেকে আসা প্রায় ৬.৫ লক্ষ প্রবাসী দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এটাই হলো সরকারের করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক ব্যর্থতা। ঠিক একইভাবে, দেশে ৫ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে করোনার নতুন স্ট্রেইন ধরা পড়লেও তা গোপন রাখা হয়। সরকার তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ করে এবং সংক্রমণের বাস্তবচিত্র গোপন করে।

তিনি আরো জানান, শুরু থেকেই করোনা সংক্রমণ রোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় সরকারের অসহায়ত্ব ও চরম সমন্বয়হীনতা দৃশ্যমান। জাতীয় পরামর্শক কমিটি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও নীতি নির্ধারকদের মধ্যে কোন সমন্বয় ছিলো না। পরামর্শক কমিটির সিদ্ধান্ত মানা হয়নি। সরকারি সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানেন না। লকডাউন না করে সাধারণ ছুটি ঘোষণা হয়। পোশাক শিল্পের কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় অবগত নয়। কোভিড-নন কোভিড হাসপাতাল নির্ধারণ, চিকিৎসকগণ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান ইত্যাদি কার্যক্রম ছিলো চরম হতাশাব্যঞ্জক। কার্যকর লকডাউন, দ্রুত বেশি সংখ্যক পরীক্ষা, কন্টাক্ট ট্রেসিং ও চিকিৎসার পরিধি বাড়ানোর মাধ্যমে পরিক্ষিত উত্তরণ সম্ভব ছিলো- কিন্তু তা করা হয়নি। আমরা তখনও এই মহামারী নিয়ন্ত্রণে জাতীয় ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানালেও সরকারের একগুঁয়েমির কারণে তা সম্ভব হয়নি, ফলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে বারবার তাগিদ দেয়া হলেও সরকারের পক্ষ থেকে হাসপাতালগুলোকে করোনা চিকিৎসার উপযোগী করা হয়নি। তাছাড়া হাসপাতালকে কোভিড-নন কোভিড চিহ্নিত করে আলাদা না করায় দেশে স্বাস্থ্য সেবায় চরম নৈরাজ্য পরিলক্ষিত হয়েছে। করোনা রোগীরা যেমন হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেনি, তেমনি সাধারণ স্বাস্থ্য সেবা একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছে। দেশের ৭৯ টি সরকারি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরির কার্যক্রম হাতে নেয়া হলেও সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা ও উদাসীনতায় ৫০% অগ্রগতিও হয়নি এক বছরে। করোনা টেস্ট জালিয়াতি বিদেশে কর্মরত ও অবস্থানরত আমাদের প্রবাসীরা চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছিলো। জাল সনদ নিয়ে বিদেশ গিয়ে বিপাকে পড়েছে শত শত ইতালি প্রবাসী। সেখানকার পত্রিকায় এমন প্রতিবেদন এসেছে যে ইতালির প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি বাংলাদেশিকে করোনা বোমা আখ্যায়িত করেছিলেন। আমরা সরকারকে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার দাবী জানিয়েছিলাম, সরকার শুধু মালিক পক্ষকে প্রণোদনা দিয়েছে কিন্তু শ্রমিকদের জন্য কোন সহায়তা ছিলো না।

মির্জ ফখরুল আরো বলেন, বাংলাদেশের করোনা মহামারী দমনে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তোলার বিকল্প নাই। দেশের ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা গেলে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তোলা সম্ভব। এক্ষেত্রে একটি উৎস থেকে টিকা সংগ্রহে আবদ্ধ না থেকে GAVI- এর সহায়তায় অন্য কোম্পানীর টিকা যেমন জনসন, মর্ডানা, ফাইজার ইত্যাদি সংগ্রহের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। জাতির এই চরম দুর্যোগপূর্ণ সময়ে আমরা জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছিলাম। কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম খাত আরএমজি সেক্টরে কয়েক হাজার গামেন্টস বন্ধ হয়েছে। ৪০ লক্ষ শ্রমিকের জীবন জীবিকা আবার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যেই দশ লক্ষ শ্রমিক চাকরি হারিয়েছে। অর্থের অভাবে ঢাকা ছাড়ছে শত শত পরিবার। তাই সরকারের প্রতি আমাদের আবারও আহ্বান আসুন আমরা জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে এ সংকট মোকাবেলায় উদ্যোগী হই।

আরও পড়ুন