জেলার সংবাদ, নারী

ভ্যান টেনে সংসার চলে মুংলীর

জয়পুরহাট  প্রতিনিধি

ডিবিসি নিউজ

সোমবার ৮ই মার্চ ২০২১ ০৬:৪৫:৩২ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

কারো কাছে হাত না পেতে নিজের পায়ে চলার জন্য ভ্যান বেছে নিয়েছেন জয়পুরহাটের সপ্তমী রানী মুংলী। ভ্যান চালিয়ে তিন সন্তানসহ বাবা-মায়ের ভরণ-পোষণ করেন জেলার আক্কেলপুর উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের এই নারী।

মুংলী বলেন, ২০০২ সালে জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার বামনগ্রামের কাশীনাথের বেকার ছেলে বিটল মালীর সাথে চায়না ফোনিক্স বাইসাইকেল, আধা ভরি সোনা, ২০হাজার টাকা ও ঘর সাজানোর আসবাব পত্র দিয়ে খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিল। সেই সংসারে অভাব যেমন ছিল, তেমনি ছিল স্বামীর নির্যাতন। 
সংসার কি জিনিস তখন তা ঠিকমত না বুঝতেই বিয়ের পর থেকে শুরু হয় শশুর বাড়ীর নির্যাতন।" নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন মুংলী। একে একে বলতে থাকেন তাকে কিভাবে তার শশুর বাড়ীর লোকেরা নির্যাতন করত। 

"প্রথমে শশুর আমাকে মারধর করত, তারপর আমার স্বামী বিটল বাবার পক্ষ নিয়ে আমাকে কখনো চড় থাপ্পর আবার কখনো লাঠি দিয়ে পেটাত, প্রতিবাদ করলে বা জোড়ে কাঁদলে মুখে কাপড় গুঁজে দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে সিগারেট, না হয় জ্বলন্ত মশার কয়েলের ছ্যাকা দিত। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাবার বাড়ি আসলে অভাবী বাবা-মা আবারো জোর করে শশুরবাড়ি পাঠাত। তারপর দুই গুন, তিনগুন নির্যাতন।"

মুংলীর মা শেফালী রানী বলেন, এভাবে শত নির্যাতন সহ্য করে কখনো শশুর বাড়ি আবার কখনো বাবার বাড়ি আসা যাওয়ার মধ্যেই তিনটি সন্তানের জন্ম দেয় মুংলী। সন্তানদের কথা ভেবে ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে বলে মুংলীকে স্বামীর বাড়িতে বার বার পাঠানো হলেও সুখী হননি মুংলী।  

অবশেষে গত ২০১৩ সালে তিন সন্তানকে নিয়ে একেবারে চলে আসেন হত দরিদ্র বাবার বাড়িতে।

বিষ্ণাপুর গ্রামের প্রদীপ কুমার, পার্শ্ববর্তী খুলাগাড়ি গ্রামের মাসুদসহ এলাকাবাসীরা জানান, বাবার অভাবের সংসারে বোঝা হতে চাননি মুংলী,  দু বেলা দু মুঠো খাবার জোগাড় করতে ও তিন সন্তানকে মানুষ করতে শুরুর দিকে পাড়ায় পাড়ায় পান ফেরি করতেন। এতেও তার সংসারে অবস্থা পালটে না। কিন্তু হাল ছেড়ে না দিয়ে একটু বেশী আয়ের জন্য মুংলী ২০১৫ সাল থেকে শক্ত-সামর্থ পুরুষদের পেশা বলে পরিচিত ভ্যান চালাতে শুরু করেন। 

ভ্যান চালাতে আগের চেয়ে অনেক কষ্ট কম হয় জানিয়ে মুংলী বলেন, “আগে পা প্যাডেল ঘুড়িয়ে ভ্যান চালাতাম আর এখন ব্যাটারী চালিত ভ্যান চালাই। প্রতিদিন সকালে ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভ্যান চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরি। হাত-পা তখন প্রচন্ড ব্যথা করে। দিনে দুই-তিন’শ টাকা কামাই করে বাড়ি ফিরি। সেই টাকা দিয়ে সংসারের খরচ চালাই ও তিনটা ছেলে মেয়েকে পড়াশুনা করাই।"  

১২ বছর বয়সী বড় ছেলে তৃতীয়, মেঝ মেয়ে সুফলা ২য় শ্রেনীতে ও ছোট ৭ বছরের ছোট মেয়ে শংকরীকে মানুষের মত মানুষ করার স্বপ্ন দেখেন মুংলী।

ভ্যান চালক একই এলাকার বামনী গ্রমের ইয়াকুব আলী, পার্শ্ববর্তী নূর নগর গ্রামের মোস্তফাসহ এলাকাবাসীরা জানান, তারা মুংলীর সব কিছুই জানেন, মুংলীর যাতে একটু বেশী টাকা রোজগার হয় সে জন্য তারা তাকে ২/৪ জন যাত্রী বা বহনের জন্য মালামাল ছাড় দেন। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিলকপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সেলিম মাহবুব সেলিম বলেন, "মুংলীর বসত বাড়ি নেই, তাই প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে আবাসন প্রকল্পের একটি বাড়ি বানিয়ে দেয়ার জন্য তার নামের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।"

মুংলীদের সৎ উপার্জনে পাশে থাকার জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনসহ দাতাদের কাছে আহবান জানিয়েছেন এই জনপ্রতিনিধি।

আরও পড়ুন