করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী মিতা হক। রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ভোর ৬টা দিকে তার মৃত্যু হয়। মিতা হক কিডনি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। ডায়ালাইসিস করার এক পর্যায়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হন।
মিতা হক কিডনি রোগে ভুগছিলেন। গত ৫ বছর ধরে নিয়মিত ডায়লাইসিস নিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু গেল ২৫শে মার্চ করোনা আক্রান্ত হয়ে কিছুটা মানসিক এবং শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন এই সংগীতশিল্পী। করোনা আক্রান্ত হয়ে স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী মিতা হক রবিবার ভোরে মারা গেছেন।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ। এক শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশে রবীন্দ্র চর্চা এবং রবীন্দ্রসংগীতকে সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তার প্রচেষ্টা মানুষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। রাষ্ট্রপতি মরহুমা মিতা হকের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
মিতা হক এর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মরহুমার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী।
মিতা হকের জন্ম ১৯৬২ সালে। প্রথমে চাচা ওয়াহিদুল হক এবং পরে ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খান ও সনজীদা খাতুনের কাছে গান শেখেন। ১৯৭৪ সালে মিতা বার্লিন আন্তর্জাতিক যুব ফেস্টিভালে অংশ নেন। বাংলাদেশ বেতারের সর্বোচ্চ গ্রেডের তালিকাভুক্ত শিল্পী ১৯৭৭ সাল থেকে নিয়মিত তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে সঙ্গীত পরিবেশনা করছেন।
তিনি সুরতীর্থ নামে একটি সঙ্গীত প্রশিক্ষণ দল গঠন করেন, যেখানে তিনি পরিচালক ও প্রশিক্ষকে হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি ছায়ানটের রবীন্দ্রসঙ্গীত বিভাগের প্রধান ছিলেন। মিতা হক রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন পরিষদের সহ-সভাপতি ছিলেন।
মিতা হক অভিনেতা-পরিচালক খালেদ খানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। খালেদ খান ২০১৩ সালের ২০শে ডিসেম্বর মারা যান। এই দম্পতির ফারহিন খান জয়িতা নামে এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
মিতা হক ২০১৬ সালে শিল্পকলা পদক লাভ করেন। এরপর কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মিতা হককে বাংলা একাডেমির 'রবীন্দ্র পুরস্কার' দেওয়া হয়। একই বছর চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত ‘রবি-চ্যানেল আই রবীন্দ্রমেলা’য় রবীন্দ্র সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে মিতা হককে সম্মাননা দেওয়া হয়। ২০২০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে।