বৈরী আবহাওয়ায়ও নিজেকে মানিয়ে নেয় বন্দরের জেটিতে শেকলে বাঁধা ছোট্ট শিশু।
কখনও প্রখর রোদ , কখনও বৃষ্টি আবার কখনও কনকনে ঠান্ডা। ক্ষুধায় কাতর হলেও কিছুক্ষণ কান্নার পর থেমে যায় সে। যেন ভাগ্যের নির্মমতার কাছে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে নাম না জানা এক শিশু। শেকলে বাঁধা তার ছোট্ট জীবন। নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় নদী বন্দর (টার্মিনাল) এর চলাচলের জেটির পাশে শেকল দিয়ে বাঁধা ঐ ছোট্ট শিশুকে দেখেন নদীপথে মুন্সিগঞ্জ ও বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মানুষরা।
মানুষরা কেউ কেউ কৌতুহলে ছবি তুলেন, কেউ আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছেন। কিন্তু কেউ জানেন না শিশুটির ভাগ্যে কেন এই পরণতি। খোঁজ-খবর নিতে সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, নিজের সন্তানকে রেখে কাজে যান তার মা। ক্লান্ত শরীরে বা বৈরী আবহাওয়া সব কিছুকেই সহ্য করে মানিয়ে নিতে হয় শিশুটিকে।
বুধবার (৩০শে অক্টোবর) এমন একটি ছবি পাওয়া যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে। ছবির সত্যতাও পাওয়া যায় নারায়ণগঞ্জ বন্দর টার্মিনাল ঘাটে গিয়ে। সেখানে দেখা যায় একটি ছেলে শিশুকে তার মা শেকল দিয়ে বেঁধে কাজে চলে গেছেন। সেখানে অস্থায়ী কয়েক দোকানি জানান, মূলত ছেলে যেন হারিয়ে না যায় বা কোথাও না যায় সেজন্যই মা এ কাজ করেন। আবার অনেকে ভিক্ষা করতে বিভিন্ন স্থান থেকে শহরে আসেন তখন তাদের সন্তানকেও এখানে বেঁধে রেখে যান।
টার্মিনাল ঘাটের অস্থায়ী দোকানদার রবিউল জানান, এরকম দৃশ্য তিনি মাঝে মাঝেই দেখেন। অনেক সময় রাত অবধি এভাবেই টার্মিনালে বাঁধা থাকে শিশুটি। মূলত মা সঙ্গে করে বাচ্চাকে এনে এখানে বেঁধে তারপর কাজে যান আবার বাড়ি ফেরার সময় সঙ্গে করে নিয়ে যায়। তবে, কখন বাঁধেন আর কখন সেখান থেকে নিয়ে যান তা অনেক সময় দেখেন না তারা। হুটহাট বেঁধে রেখে চলে যান।
রবিউলের কথার প্রমাণও পাওয়া যায়। কথা বলার জন্য দুপুরের পর থেকে সেখানে থাকলেও বিকেলে হঠাৎ করেই দেখা যায় শিশুটি সেখানে নেই। পরে, সেখানে থাকা জয়নাল নামে একজন জানান তিনি একটু আগেই দেখেছেন এখন অর্ধ বয়স্ক মহিলা তালা খুলে নিয়ে যাচ্ছেন শিশুটিকে।
শেকলে বাঁধা এমন ছবি বা দৃশ্য দেখে অনেকেই শিশুটিকে খাবার কিনে দেন আবার অনেকেই রোদ বৃষ্টিতে তাকে ছাতা কিংবা পানি কিনে দেন। তবে, শিশুটিকে এমন বন্দি অবস্থায় দেখে মায়া হলেও কর্মব্যস্ত এ জীবনে কেউ বেশি সময় নিয়ে দেখার সময়ও পান না।
এ ব্যাপারে যথাযত কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্থানীয় অনেকেই। তাদের মতে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি এই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা করা হতো তাহলে হয়তো তাদের সড়কে এভাবে বন্দি থাকতে হতো না। অথবা যদি সকলের কাজের স্থানেই শিশুদের রাখার জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকতো তাহলে আর কোনো মা হয়তো আর তার সন্তানকে এভাবে বেঁধে কাজে যেতেন না।