সাইবার জগতে মিথ্যা পরিচয়ে যৌনতার ফাঁদ; অসংখ্য নারীকে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার তরুণ।
বাস্তবে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় দশা হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর ছেলে। মিথ্যা পরিচয়ে একের পর এক নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়েন। তারপর কৌশলে নারীদের নগ্ন ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করে শুরু করেন ব্ল্যাকমেইলিং। বাধ্য করেন শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে। এখানেই শেষ নয়। ছবি ও ভিডিও ফাঁস করে দেয়ার হুমকি দিয়ে হাতিয়ে নেন টাকাও। অভিযুক্ত তরুণ এখন কারাগারে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয় থেকে প্রেমের সম্পর্কে জড়াচ্ছেন অনেকে। সাইবার দুনিয়ায় মেতে উঠছেন যৌনতায়। ভাগাভাগি করছেন নিজেদের নগ্ন ছবি ও ভিডিও। এরপরই ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা নেমে আসছে অনেকের জীবনে।
ছবি ও ভিডিও যোগাড়ের পর প্রেমিকাকে ব্ল্যাকমেইলিং শুরু করছে প্রেমিক। বাধ্য করছে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে। এমনকি ফ্যান্টাসি পূরণে প্রেমিকাকে অন্যের সঙ্গেও যৌনতায় লিপ্ত হতেও বাধ্য করা হচ্ছে। এক পর্যায়ে শেকল ভেঙে বের হওয়ার চেষ্টা করলে ভুক্তভোগীর ছবি ও ভিডিও ফাঁস করে দেয়ার হুমকি দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কথিত প্রেমিক।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, আমার সাথে ফেইসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয়। কয়েকদিন কথা বলার পর আমাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। তখন সে আমাকে জোর করলে আমি তাকে কিছু ছবি পাঠাই। ছবি পাঠানোর পর থেকে আমাকে ব্ল্যাকমেইলিং করা শুরু করে, টাকা চায়। পরে আমি আমার পরিবারকে বিষয়টি জানাই।
মামলার তদন্তে নেমে অভিযুক্ত তরুণ শাহীন আলম হৃদয়কে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা বিভাগের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। বাস্তবে দরিদ্র হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেকে ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর সন্তান পরিচয় দিতেন তিনি।
ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম) উপ কমিশনার মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেন, তার উদ্দেশ্যই হচ্ছে অবৈধ এসব কাজ করা ব্ল্যাকমেইলিং করা। একাধিক নারী তার ব্ল্যাকমেইলিং এর শিকার হয়েছে। সে প্রায় দুই-তিন বছর যাবৎ এসব কাজ করে আসছে। আমরা এখন পর্যন্ত দশ-বারো জন নারীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি।
সাইবার দুনিয়ায় ফাঁদ পেতে নারীদের যৌন হয়রানির ঘটনা দিন দিন আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। এ বছরের প্রথম আট মাসেই এ ধরনের মামলা হয়েছে অন্তত বিশটি। গ্রেপ্তার হয়েছে বাইশ জন নিপীড়ক।
ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম) উপ কমিশনার মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন কিছু আদান-প্রদান করা উচিত না যাতে পরবর্তীতে তা দিয়ে কেউ ব্ল্যাকমেইলিং এর শিকার হয়। অনেক সময় আবার হ্যাকাররা আমাদের ব্যবহৃত ডিভাইসটাও হ্যাক করতে পারে। তাই আমরা এমন কিছু মোবাইলে রাখবো না যা দিয়ে আমরা এসব মানুষ দ্বারা বিপদগ্রস্ত হতে পারি।
পুলিশ বলছে, ভুক্তভোগীদের অনেকেই মামলা করতে আগ্রহী না হওয়ায় সব অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না।