মানিকগঞ্জে প্রথমবারের মত বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী ফুল চাষ হচ্ছে। জেলার হরিরামপুরে কৃষি অফিসের সহায়তায় ১০ বিঘা জমিতে এই ফুলের আবাদ করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, তেল ফসলের আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজস্ব প্রকল্পের আওতায় জেলার হরিরামপুরে প্রথমবারের মত আবাদ হচ্ছে সূর্যমুখী। উপজেলার ১০ বিঘা জমিতে ১০ জন কৃষক কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় এর আবাদ শুরু করেছেন।
উপজেলার আন্ধার মানিক গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম জানান, সার, বীজ, সেচ ও কীটনাশক মিলিয়ে বিঘাপ্রতি জমিতে সূর্যমুখী চাষে খরচ হবে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। খরচ বাদে বিঘা প্রতি আয় হবে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই এর ফলন পাওয়া যাবে।
তিনি আরও জানান, সূর্যমুখীর কান্ড জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার ও বিক্রি করা যাবে। যা থেকে বাড়তি একটা লাভ মিলবে। তাছাড়া এটি চাষে তেমন কোন ঝামেলা নেই। শুধুমাত্র দুটি সেচ দিলে এবং ফুলগুলো একটু পর্যবেক্ষণ করলেই হলো।
একই গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম জানান, ধান-পাট চাষে প্রচুর পরিশ্রম এবং খরচ হয় কিন্তু সূর্যমুখী চাষে খরচ কম লাভ বেশি। যে কারণে আগামীতে অনেক কৃষকই সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকবে।
জেলা পরিষদের সদস্য চায়না বেগম জানান, জেলার হরিরামপুরেই প্রথমবারের মত সূর্যমুখী ফুলের চাষ হচ্ছে। এর আগে কখনও বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ হয়নি। অনেকেই সৌন্দর্যবর্ধনকারী ফুল হিসেবে বাড়ির আঙিনায় এটা লাগিয়ে থাকতো। কৃষি বিভাগের প্রদর্শণী এই প্লটের মাধ্যমে স্থানীয়দের মাঝে এটি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। অনেক কৃষকই এটার প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখাচ্ছে। আগামীতে স্থানীয়ভাবে এর ব্যাপকতা অনেক বাড়বে এবং কৃষকরাও সূর্যমুখী চাষে লাভবান হবেন।
হরিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক জানান, বাংলাদেশ ভোজ্য তেলের প্রচুর ঘাটতি রয়েছে। প্রতি বছর ১৪ থেকে ২০ লক্ষ মেট্রিক টন ভোজ্য তেল দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। যে কারণে আমাদের দেশের প্রচুর পরিমাণ মুদ্রা বিদেশে চলে যায়। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার সেটি নিরসনে রাজস্ব প্রকল্পের আওতায় হরিরামপুরে প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে এর চাষ শুরু করেছে। প্যাসিফিক হাইসান-৩৩ জাতের সূর্যমুখী ফুল এখানে চাষ হচ্ছে। ১০ জন কৃষককে বীজ, সার, আন্ত:পরিচর্যাসহ বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কৃষি বিভাগ প্রতিনিয়তই প্লটগুলো পর্যবেক্ষণ করছে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা এবার প্রতি বিঘায় ৩০ হাজার টাকা লাভ করতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে কোম্পানি সরাসরি এর বীজ কিনে নিবেন। কৃষকদের সঙ্গে কোম্পানির প্রতিনিধিদের আন্ত:সর্ম্পক তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে কৃষকরা এটি কোথায় বিক্রি করবে সেটি নিয়ে চিন্তার কোন কারণ থাকবেনা। আগামী বছরই এই এলাকায় হাজার বিঘা জমিতে এর চাষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।