সরকারি স্বীকৃতি পেলেও নাগরিক হিসেবে কোন মৌলিক অধিকারই নিশ্চিত হয়নি হিজড়া জনগোষ্ঠীর। সবচেয়ে বেশি দুরাবস্থা হিজড়াদের স্বাস্থ্যসেবায়। চিকিৎসকদের অবহেলা যেমন রয়েছে তেমনি সরকারি ব্যবস্থাপনায়ও নেই হিজড়াদের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি।
রাজধানীর একটি সড়কে ভ্রাম্যমাণ খাবার দোকান পরিচালনা করেন কণিকা হিজড়া। মাস দুয়েক আগে সড়ক দুর্ঘটনায় পায়ের হাড় ভেঙে যায় কণিকার। একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হলেও সঠিক চিকিৎসা পাননি কণিকা। বাধ্য হয়ে চিকিৎসা শেষ না করেই হাসপাতাল ছাড়তে হয় তাকে।
কণিকা বলেন, 'হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ভর্তি নেয়না। আম ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে আমাকে ভর্তি নেয়না। বলে যে কোথায় রাখবে, কি করবে। যে কয়দিন আমি হাসপাতালে ছিলাম ডাক্তারের ও হাসপাতালের বিল ঠিকভাবেই দিয়েছি, কিন্তু আমি সেভাবে সেবা পাইনি। যার কারণে আমি বাসায় চলে এসেছি।'
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে একাধিকবার হয়রানির শিকার হয়েছেন নীলা হিজড়া। বাধ্য হয়ে একটি বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় কোনরকমে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ভুলেও আর সরকারি হাসপাতালমুখো হন না তিনি।
নীলা বলেন, 'পাক্কা ৩ ঘণ্টা কেউ আসেনি। নার্স ও ডাক্তাররা হাসাহাসি ও টিটকারি করছে। এটা দেখে আমার আর ভালো লাগেনি, আমি বাসায় চলে এসেছি।'
চিকিৎসা নিতে গিয়ে প্রায় সব হিজড়াকেই কমবেশি এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়। আরো একজন জানান, 'আল্ট্রাসনো রুমে গেলাম, আমাকে বললো আমি কে। আমি বললাম, আমি হিজড়া। তখন ওই মহিলাটা দৌড় মারলো, তার দেখাদেখি পিছনের মহিলাটাও দৌড় বের হয়ে গেলো। এটা দেখে আমার খুবই খারাপ লাগলো।'
স্বাস্থ্যসেবায় হিজড়াদের এই বঞ্চণার কথা স্বীকার করলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রি. জে. নাজমুল হক। দিলেন ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও। তিনি বলেন, 'আমাদের যারা অন্য পেশেন্ট থাকে এবং যারা অ্যাটেন্ডেন্ট থাকেন, ও যারা যারা কর্মচারী থাকেন, তাদের যে সোশ্যাল স্টিগমা আছে সেই প্রতিবন্ধকতা কাজ করে। আমরা তাদের জন্য একটা রুমের বন্দোবস্ত করেছি। যদি তারা আসে যেন কোন অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি না হয়। একটা কার্যকরী পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি।'
তবে শুধু একটি হাসপাতাল নয়। দেশের সব চিকিৎসাকেন্দ্রে হিজড়াদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা না হলে পাল্টাবে না এ চিত্র।