হবিগঞ্জে এসএসসি পরীক্ষার্থী মাদিনাতুল কুবরা জেরিনের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।
জেরিনের মৃত্যুর বিষয়ে প্রথমে সড়ক দুর্ঘটনা মনে করা হলেও তদন্তে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। পুলিশ জানিয়েছে, প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সিএনজি অটোরিকশা থেকে ফেলে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে জেরিনকে। এ ঘটনায় আটক জাকির হোসেন আদালতে অপরাধ স্বীকার করেছে।
গত ১৮ই জানুয়ারি হবিগঞ্জে সিএনজি অটোরিকশা থেকে নামতে গিয়ে পড়ে মারা যান এসএসসি পরীক্ষার্থী রিচি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী মদিনাতুল কুবরা। এমনটাই বলা হয়েছিল বিভিন্ন গণমাধ্যমে। দুর্ঘটনার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে জেরিনের স্কুলের শিক্ষার্থীরা। এরপর দুই দিন হবিগঞ্জ-লাখাই সড়কে সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ ছিল। দুর্ঘটনার বিষয়টি জেরিনের পরিবারও বিশ্বাস করেছিল। তাই কোনও রকম ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয় জেরিনের মরদেহ।
কিন্তু, দাফনের পর পুলিশের কাছে খবর আসে জেরিনের মৃত্যুর পিছনে রয়েছে ভিন্ন কারণ। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। এতে, বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
পুলিশ জানায়, বেশ কিছুদিন ধরে জেরিনকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল একই গ্রামের জাকির হোসেন নামে এক যুবক। কিন্তু তাতে সায় দেয়নি জেরিন।
১৮ই জানুয়ারি সকালে জেরিনের বাড়ির সামনে পূর্বপরিকল্পিতভাবে একটি সিএনজি অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে রাখে জাকির। ওই অটোরিকশায় জেরিন উঠে কিছু দূর যাওয়ার পর জাকির ও তার সহযোগী হৃদয় ওই সিএনজি অটোরিকশায় ওঠে। পরে জেরিনকে জোর করে নিয়ে যেতে চাইলে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে জেরিনকে সিএনজি থেকে ফেলে দেয়া হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় জেরিনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় জেরিন।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার জাকির হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মামলার অপর দুই আসামি অটোরিকশা চালক নুর আলম ও হৃদয়কে ধরতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম জানান, 'জাকির আদালতে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তার জবানবন্দি অনুযায়ী আরও দু’জন এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।'
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে জেরিনের শিক্ষক, সহপাঠি ও স্থানীয়রা। ৮ম শ্রেণিতে বৃত্তি পাওয়া মেধাবী ছাত্রী জেরিনকে হত্যায় দোষিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় তার পরিবার।
এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে জেরিনের বাবা। ময়নাতদন্তের জন্য তার মরদেহ কবর থেকে তোলা হবে।