জেলার সংবাদ

‘করোনা না হামরা না খাই মরিমো’

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

ডিবিসি নিউজ

বুধবার ১লা এপ্রিল ২০২০ ১১:৪০:০২ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

'করোনা ভাইরাসের তানে সরকার দোকানপাট বন্ধ করি দিল। দোকাদারির টাকা দিয়াই হামার সংসার চলে। এলা দোকান বন্ধ ঘরত নাই চাল ডাল। ছোয়ালাক ধরি খামো কি?

‘করোনা ভাইরাসোত না, হামরা এলা না খাই মরিমো’ ক্ষোভে কষ্টে কথাগুলো বলছিলেন পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার চেংঠী হাজরাডাঙ্গা ইউনিয়নের চেংঠী বাজারের চায়ের দোকানদার সাপিয়ার রহমান। বাড়ি ভিটা নেই। জোড়াতালি দেয়া নিজের চায়ের দোকানের এক কোনে ৪ সদস্যের পরিবার নিয়ে বাস করেন তিনি। ছোট্ট এই চায়ের দোকানের আয়েই চলতো তার সংসারের চাকা। কিন্তু, করোনায় থমকে গেছে এই সকল মানুষের জীবনযাত্রা। ঘরের চাল ডালও ফুরিয়ে এসেছে। অর্ধাহারে অনাহারে কাটছে তাদের দিনরাত। সরকারী সহায়তা এখনো তাদের ভাগ্যে জোটেনি।

ত্রাণের অপেক্ষায় ক্ষুধার্থ মানুষগুলোর পেটে ক্ষুধার জ্বালা আর চোখে দুশ্চিন্তার ছায়া। কাজ নেই, খাবার নেই তার মধ্যে দীর্ঘ হচ্ছে অঘোষিত লকডাউন। এই সঙ্কট কতদিনে শেষ হবে তাও জানা নেই তাদের। অনিশ্চয়তায় তাদের দুর্ভোগের পাল্লাটা আরও ভারি হচ্ছে।

সাপিয়ার রহমান বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের তানে সরকার দোকানপাট বন্ধ করি দিল। দোকাদারির টাকা দিয়াই হামার সংসার চলে। এলা দোকান বন্ধ ঘরত নাই চাল ডাল। ছোয়ালাক ধরি খামো কি? এলাও কাহো হামাক কিছু দিল নাই। হামার খুব কষ্ট, দেখিবার কাহো নাই। এনং অবস্থা চলিবার ধইল্লে করোনা ভাইরাসোত না, হামরা এলা না খাই মরিমো।’

শুধু চা দোকানদার সাপিয়ার রহমান নন তার মতো পঞ্চগড়ের কয়েক লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, নিম্ন আয়ের মানুষ ও শ্রমজীবীর পরিবারে চলছে একই সঙ্কট। চলাফেরা এবং দোকানপাট খোলা রাখার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকায় দুর্ভোগে কাটছে তাদের দিন। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরও ভয়াবহ। সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছেন দিন এনে দিন খাওয়া মানুষেরা। পঞ্চগড়ের প্রায় ৫০ হাজার পাথর শ্রমিক, কয়েক হাজার চা শ্রমিক, হাজারো দিনমজুর, কৃষি শ্রমিক ও রিক্স-ভ্যান চালকসহ নিম্নআয়ের মানুষের পরিবারে নেমে এসেছে কৃত্রিম আকাল।

কাজ নেই ভাত নেই এমন করেই সরকারি সহায়তার আশায় ঘরে বসে অলস সময় অতিবাহিত করছেন তারা। জেলা প্রশাসন থেকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। প্রশাসনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায়েও ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু, তা জেলার বিরাট অঙ্কের নিম্নআয়ের মানুষের তুলনায় খুবই কম। এছাড়া অনেক এলাকায় এখনো ত্রাণ পৌঁছায়নি।

পঞ্চগড়ের পাথর শ্রমিক রেহেনা খাতুন বলেন, আমরা দিন এনে দিন খাই। করোনাভাইরাসের জন্য আমাদের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আমাদের ঘরে বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই। এখন পর্যন্ত প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি কেউ আমাদের চাল ডাল দেয়নি। মানুষের কাছে ধার দেনা করে কয়েকদিন চললাম। সামনে কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। সরকারের নির্দেশে আমাদের কাজ বন্ধ হয়েছে। আমাদের দাবি যতদিন কাজ বন্ধ থাকবে ততদিন আমাদের খাবারের ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে।

দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রত্যয় হাসান বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১ হাজার মানুষকে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছি। প্রকৃতপক্ষে যারা ত্রাণ পাওয়ার যোগ্য তাদেরকেই ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। অসহায় দরিদ্রদের মধ্যে যারা এখনো ত্রাণ পাননি তাদের শিগগিরই খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।

পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান বলেন, 'আমরা প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তদের মাধ্যমে সরকারি ত্রাণ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। এ পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার মানুষকে চাল ও নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। আমরা যা বরাদ্দ পাচ্ছি সাথে সাথেই তা বিতরণের জন্য পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া আমরা দুস্থ ও শ্রমজীবী মানুষের তালিকা তৈরি করছি। তালিকা ধরে ধরে তাদের হাতে ত্রাণ পৌঁছানো হবে। যদি প্রকৃত দুস্থ অসহায় ও শ্রমজীবীদের কেউ বাদ পড়ে থাকে আমাদের জানালে আমরা তাকে ত্রাণ সহায়তার ব্যবস্থা করবো।'

আরও পড়ুন