জাতীয়, রাজনীতি

'ক্ষমতায় গেলে অপসারণ করা হবে বাহাত্তরের সংবিধান-সব ভাস্কর্য'

নাদিম মাহমুদ

ডিবিসি নিউজ

শনিবার ১২ই ডিসেম্বর ২০২০ ০৮:৩৮:১৭ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

ক্ষমতায় গেলে অপসারণ করা হবে বাহাত্তরের সংবিধান-সব ভাস্কর্য বললেন হেফাজত নেতা মামুনুল হক।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা মামুনুল হকের দাবি অনুযায়ী, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বিনির্মাণের উদ্দেশ্যে কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেনি। বাহাত্তরের সংবিধানের মাধ্যমে এসব চেতনা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা কোনদিন ক্ষমতায় যেতে পারলে অপসারণ করা হবে দেশের সব ভাস্কর্য।  প্রতিক্রিয়ায় লেখক-গবেষক মারুফ রসূল বলেছেন, ইসলামের দোহাই দিয়ে একাত্তরে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছে, একই কায়দায় কথা বলছেন মামুনুল।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা গড়িয়েছে ভাঙচুর পর্যন্ত। কুষ্টিয়ায় ভাস্কর্য ভাঙচুরে জড়িত থাকার দায়ে গ্রেপ্তার চার মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষকের বরাতে পুলিশ বলেছে, হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী, যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ও ইসলামী আন্দোলনের নেতা ফয়জুল করিমের বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছে তারা।

বিরোধিতা করলেও ভাস্কর্য ভাঙচুর করতে বলেননি বলে মামুনুলের দাবি। তিনি বলেন, কেউ যদি আমার বক্তব্যকে ভুলভাবে নেয় বা ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে বা পর্যালোচনা করে তাহলে তার দায় আমি নিবো না।

লেখক ও গবেষক মারুফ রসূল বলেন, ব্লগার রাজীব হায়দারকে হত্যা করার পর হত্যাকারীরা বক্তব্য দিয়েছিল যে জসীম রেহমানি এর বয়ান শুনে তারা তাকে হত্যা করেছে। আদালত কিন্তু তখন জসীম রেহমানিকে শাস্তি দিয়েছিল। তাহলে এই ক্ষেত্রে মামুনুল হকের বক্তব্যের জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা উচিত। এটাকে আমার রাষ্ট্রের রাজনৈতিক দুর্বলতা মনে হচ্ছে।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মহাসচিবের দায়িত্বে থাকা মামুনুল বলেন, কোনদিন ক্ষমতায় যেতে পারলে দেশের সব ভাস্কর্য অপসারণ করা হবে। সংবিধান হবে ইসলামের ভিত্তিতে।

 এ প্রসঙ্গে লেখক ও গবেষক মারুফ রসূল বলেন, তার একথার মানে কি তারা তাহলে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকেও ইসলামীকরন করবে। কিন্তু তারা চাইলেও তো তা পারবে না। কারণ তখন প্রত্যেকটা ইসলামী দল পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। তারা যদি কখনো ক্ষমতায় আসে তাহলে এদেশে কখনো শিল্প থাকবে না। 

ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিষয়ে মামুনুল বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতার যে চেতনার কথা বলা হয় একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধেও আমরা সেই চেতনা খুঁজে পাইনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নতুন একটি চেতনা দাঁড় করানো হয়েছে যেটা বাহাত্তরের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেটাকে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হিসেবে গ্রহণ করতে রাজী না।
 
লেখক ও গবেষক মারুফ রসূল বলেন, মামুনুল হকের যে পারিবারিক ইতিহাস সেতা আমরা জানি। বিভিন্ন পত্রিকায় তার বাবার একটা সাক্ষাৎকার ছাপানো হয়েছিল যে আমরা নিরপেক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছি।এই ধরণের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য তারা দিতেই পারে কিন্তু পাকিস্তানের যে সাম্প্রদায়িক দর্শন সে সাম্প্রদায়িক দর্শনের বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গ্রঠণের জন্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল।

ভাস্কর্য ইস্যুতে সরকারপ্রধানের সঙ্গে হেফাজতের আলোচনা করার আগ্রহ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, সরকারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। আমরা আশা করছি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সরকারের সর্বোচ্চ মহলের সঙ্গে বৈঠক হবে।

এ বিষয়ে মারুফ রসূল বলেন, যে শফীপন্থীর সঙ্গে বর্তমান সরকারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, তাই বাবুনগরীর সঙ্গেও তারা সম্পর্ক তৈরি করতে চাচ্ছে। তারা চিন্তা করেছে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করলে রেলের জমি পাওয়া যায়। তারা দেখেছে এখন যদি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায় তাহলে তা অপরাজেয় বাংলাদেশ বা রাজু ভাস্কর্য দিয়ে সম্ভব না। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য দিয়েই সম্ভব।

সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখতে সাস্কৃতিক জাগরণের ওপর জোর দেন মুক্তমনারা।

আরও পড়ুন